আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুন্দর নামগুলোর মধ্যে দুটি নাম হলো-‘আর-রহমান’ ও ‘আর-রহীম’। এর অর্থ হলো-পরম দয়াময় ও অতি দয়ালু। আল্লাহ তায়ালার রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত আমরা মানুষ। তার অশেষ রহমত ও করুণা আমাদের গোটা অস্তিত্বে ছেয়ে আছে। আর আল্লাহর এ রহমতকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রহমত রুদ্ধ হয়ে গেলে তা বিমুক্ত করারও কেউ নেই। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সব রহমত ও করুণার অধিপতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ,আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই।
আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় [সূরা আল ফাতির : ২]।
ইমাম শানকীতি রহ. বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ আয়াতে রহমত বলতে তার ব্যাপক ও বিশাল রহমত বুঝিয়েছেন, যা দুনিয়া ও আখিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে আর দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে শামিল করে’।
সব মানুষের প্রতি, সব প্রাণীর প্রতি দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা করার জন্য ইসলামের নবি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৃষ্টির প্রতি রহম বা দয়া ছাড়া স্রষ্টার দয়া-করুণা-রহমত লাভের আশা করা যায়না।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘দয়াকারীদের প্রতি মহান দয়াময় আল্লাহ রহম ও দয়া করেন। দুনিয়াতে যারা আছে; তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে আসমানে যিনি আছেন; তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। [আবু দাউদ ও তিরমিজি]।
ইমাম আহমাদ ও তাবারানি [রহ.] বর্ণিত বিশুদ্ধ সনদে ও নির্ভরযোগ্য সুত্রে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মিম্বরে দাঁড়ানো অবস্থায় বলেন, তোমরা দয়া করো, দয়া পাবে। ক্ষমা করো, ক্ষমা পাবে’(আহমদ)।
জারির ইবনে আবদুল্লাহ [রা.] থেকে বর্ণিত রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম করে না আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি রহম করেন না। [মুসলিম]।
পরম দয়াময় অতি দয়ালু আল্লাহর বান্দা আমরা। তিনি চান আমরা যেন একে অন্যের প্রতি রহম করি। সব সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া-করুণা-অনুকম্পা প্রদর্শন করি।
ইমাম আহমাদ [রা.] থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসেছে, রাসুল [সা.] একবার মিম্বরে দাঁড়ানো অবস্থায় বললেন, ‘তোমরা দয়া করো, দয়া পাবে। ক্ষমা করো, ক্ষমা পাবে।’ [আহমদ]।
শুধু রাসুল [সা.]-এর কথাই নয়। আল্লাহ তায়ালা রাসুলের সাহাবিদের পরস্পরে রহম বা দয়া চর্চাকারী বলে প্রশংসা করেছেন।
পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে,
‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়।’ [সূরা আল ফাতহ : ২৯]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম আকৃতিতে। তিনি তাকে অন্যান্য বহু সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে [সূরা আত তীন :৪]।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিজক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের ওপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি [সূরা আল ইসরা : ৭০।
মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে আর যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
তিনিই পৃথিবীতে যা আছে সব তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন [সূরা আল বাকারা : ২৯।
কাজেই গোটা পৃথিবীটাই তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য রহমত-দয়া-করুণা ও অনুগ্রহ হিসেবে। অন্যকে ক্ষমা করা, দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা ছিল নবিজি [সা.] এর সহজাত স্বভাব। তিনি নিজে এই কাজে এগিয়ে ছিলেন এবং সাহাব আজমাইনসহ গোটা উম্মতকে দয়া-মায়া ও মমতা-করুণার আমলে অগ্রগণ্য থাকার জন্য উপদেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবার প্রতি দয়া-মায়াশীল ও মমতাময়ী হবার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post