সাইফুল ইসলাম তাওহিদ
হিজরত শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা বা ছেড়ে দেওয়া। ব্যাপক অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা স্থানকে ত্যাগ করাকে হিজরত বলে। এটি একটি ইবাদত। হিজরত শরিয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। যার অর্থ দ্বিন ও ইমানের সুরক্ষা এবং নিরাপদে নির্বিঘ্নে ইবাদত করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুফরি ভূখণ্ড বা অনিরাপদ ভূখণ্ড ত্যাগ করে ইসলামী ভূখণ্ড বা নিরাপদ ভূখণ্ডের দিকে গমন করা। হিজরত ইসলামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ইসলামী ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী একটি ঘটনা। মক্কা থেকে মদিনায় রাসুল (সা.)-এর হিজরতের ঘটনায় রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় দিক। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আল্লাহর ওপর ভরসা করা : দ্বিন প্রচার করতে গিয়ে নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতি সামনে এলেও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। হিজরত মানে হেরে যাওয়া নয়; বরং চূড়ান্ত বিজয়। কারণ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার ঘোষণা রয়েছে। পবিত্র কোরাআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অন্যায়ভাবে গৃহ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু তাদের এ কথা বলার কারণে যে ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক।’ আল্লাহ যদি মানুষের এক দলের দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারত্যাগীদের উপাসনালয়, গির্জা ও ইহুদিদের উপাসনার স্থান আর মসজিদ, যেখানে আল্লাহর নাম অধিকহারে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে, আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রান্ত।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪০)
শত্রুদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায় : যুগে যুগে ধর্মপ্রচারকরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধেও ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কারণে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কাফেররা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দি অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেওয়ার জন্য যখন তারা যেমন ষড়যন্ত্র করত তেমনি, আল্লাহও কৌশল করতেন। বস্তুত আল্লাহর কৌশল সবচেয়ে উত্তম।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩০)
প্রয়োজনে অমুসলিমের সহযোগিতা নেওয়া যায় : হিজরতের পথে রাসুল (সা.) আব্দুল্লাহ ইবনু উরাইকিত নামে এক মুশরিক ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উরাইকিত রাসুল (সা.) ও আবু বকর (রা.)-কে হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার নিরাপদ পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এখানে অমুসলিম থেকে সাহায্য নেওয়ার শর্ত হলো, যার থেকে সাহায্য নেওয়া হবে তিনি বিশ্বস্ত হতে হবে।
নারীরাও দ্বিনি কাজের সহযোগী হতে পারে : ইসলাম নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ সে সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি। সভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতিতে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলামী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিজরতের ঘটনায় নারীর ভূমিকা আছে। হিজরতের সময় রাসুল (সা.) ও আবু বকর (রা.) তিন দিন সাওর গুহায় অবস্থান করেন। এ সময় আবু বকর (রা.)-এর মেয়ে আসমা (রা.) রাসুল (সা.) ও আবু বকর (রা.)-এর জন্য খাবার নিয়ে আসতেন এবং তাদের মক্কার খবরাখবর জানাতেন।
কাজের ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা : হিজরত এক দিনে হয়নি। রাসুল (সা.)-এর কাছে যখন মদিনার প্রতিনিধিদল আসে তখন তাদের শুধু ইসলামের প্রতি অনুপ্রাণিত করে কিংবা শুধু কোরআন শিক্ষা দিয়ে থেমে থাকেননি। পরবর্তী বছর তাদের থেকে বাইআত গ্রহণ করেন। তাদের পরিশুদ্ধ করেন। তাদের মাধ্যমে মদিনাকে হিজরতের ভূমি হিসেবে প্রস্তুত করেন।
ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি : রাসুল (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পর মক্কার কুরাইশরা রাসুল ও মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। দিন দিন এই নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। আবু বকর, উসমান, ইয়াসির, সুমাইয়া, বেলাল, মুসআব ইবনু উমাইরসহ আরো অনেক সাহাবিকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। হিজরতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল ও মুসলমানকে সাহায্য করেন। এবং তাদের কুরাশইদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি দেন।
Discussion about this post