সেরাতুল মুস্তাকীম ডেস্ক
মুসলমানের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন জুমা। এ দিন জোহরের ওয়াক্তে নিরবে মনোযোগের সঙ্গে খুতবাহ শোনা এবং জামাতে দুই রাকাত নামাজ পড়া হচ্ছে প্রধান কাজ। অথচ জুমার খুতবায় অংশগ্রহণ করে নামাজ পড়ার পরও অনেকের নামাজ কোনো কাজে আসে না। তবে তারা কারা? আর এর কারণই বা কী?
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আদব হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে নিঃশব্দে মসজিদে গিয়ে যেখানে জায়গা থাকবে সেখানে অবস্থান নেওয়া; সময় থাকলে সুন্নাত নামাজ পড়া এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে, কারো ঘাড় টপকে সামনে না গিয়ে চুপচাপ ইমামের খুতবা শোনা এবং নামাজ পড়া। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম করবে; তাদের নামাজ হবে অর্থহীন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনায়ও তা ওঠে এসেছে।
১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার নামাজে সাধারণত তিন ধরনের লোক উপস্থিত হয়। (তারা হলো)-
> এক ধরনের লোক অনর্থক কাজ সহকারে উপস্থিত হয়। (অর্থাৎ খুতবাহর সময় সে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে ও অযথা কাজ করে) জুমা থেকে সে তা-ই পায় (অর্থাৎ তার জুমা বৃথা যায়)।
> আর এক ধরনের লোক আছে যারা দোয়া সহকারে উপস্থিত হয়। সে আল্লাহর কাছে কোনো কাঙ্খিত বস্তু প্রার্থনা করে; আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে তাকে তা দান করেন; আর না চাইলে বঞ্চিত রাখেন।
> আর এক ধরনের লোক আছে যারা উপস্থিত হয় সন্তর্পণে নীরবতার সঙ্গে (শুধু জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে) এবং সামনে যাওয়ার জন্য কোনো মুসলমানের ঘাড় টপকায় না; আর কাউকে কোনো ধরনের কষ্টও দেয় না। তার এ কাজ তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সময়ের সব (সগিরাহ) গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। এবং আরো অতিরিক্ত তিনদিনের জন্য। এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি একটি ভালো কাজ করে তার জন্য তার দশগুণ বিনিময় রয়েছে।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
শুধু তা-ই নয়, এমন অনেক মুসল্লি আছে; যারা মসজিদে আসে, ইমামের খুতবার সময় কথাবার্তা বলে। মানুষের কাঁধ টপপে সামনে এগুতে থাকে। তারাও জুমা থেকে ফায়েদা নিতে পারে না। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন এভাবে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন মসজিদে কথাবার্তা বলে, অথচ ইমাম সে সময় খুতবাহ দিচ্ছে- এ ব্যক্তি গাধার মতো; যে শুধু বোঝা টানে (অথচ তা থেকে উপকৃত হতে পারে না)। আর যে লোক তাকে ‘চুপ করুন’ তার জন্যও জুমা নেই (অর্থাৎ তার জুমাও হয়নি অথবা জুমার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ সে নিজেও চুপ থাকেনি)।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
অথচ মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমার দিনটি সপ্তাহের সবচেয়ে খুশির দিন; আনন্দের দিন। এ দিনটি বান্দার বিশেষ ইবাদতের দিন। এ সম্পর্কে প্রিয় নবি কোনো এক জুমার দিন ঘোষণা দেন-
‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন, একে আল্লাহ তাআলা (মুসলমানদের জন্য) খুশির দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা এ দিনে গোসল কর, যার সুগন্ধি আছে সে তা ব্যবহার করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না (অর্থাৎ সুগন্ধি ব্যবহার কর) এবং মেসওয়াক করাকে আবশ্যক মনে কর।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানে উচিত, জুমার দিন নামাজ পড়তে গিয়ে যথাযথ হক আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিশ্চুপ থাকা, ইমামের খুবা শোনা এবং জুমার নামাজ পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী খুতবাহ শোনার এবং নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post