মাওলানা আহমাদ রাইদ
শাবান রমজানের আগের মাস। শাবান রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। শাবান শেষেই রমজানের একফালি চাঁদ দেখা যায় আকাশের সুদূর দিগন্তে। সারা বিশ্বে তখন বইতে শুরু করে প্রতীক্ষার পবিত্র ও প্রিয় মাহে রমজান।
রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা করা ফরজ। এর বাইরে সপ্তাহে, মাসে এবং বছরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনে নফল রোজা রাখার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সর্বাধিক নফল রোজা শাবান মাসে।
রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন
রমজানের ব্যাপারে আগ্রহ, গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আল্লাহর রাসুল (সা.) শাবান মাস থেকেই বেশি বেশি রোজা রাখতেন। তিনি এ মাসের বেশির ভাগ দিন রোজা রাখতেন। উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আমি আপনাকে দেখিনি। ’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। ’ (নাসাঈ, হাদিস : ২১৭৯)
আয়েশা (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) একাধারে (এত অধিক) সাওম পালন করতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সাওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) সাওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে সময় কাটাতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সাওম পালন করবেন না। আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো পুরো মাসের সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে অধিক (নফল) সাওম পালন করতে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯)
শাবানে যেভাবে রোজা রাখতেন নবীজি
শাবান মাসে রাসুল (সা.)-এর সর্বাধিক রোজা রাখার কথা সিহাহ সিত্তার সব হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো কখনো ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখতেন। আমরা বলতাম, তিনি মনে হয় আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। আবার কখনো এভাবে রোজা রাখা ছেড়ে দিতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি মনে হয় আর কখনো রোজা রাখবেন না। রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে আমি রাসুল (সা.)-কে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতে আমি রাসুল (সা.)-কে দেখিনি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
শাবান এখন মুমিনের দরবারে পৌঁছে গেছে। এই মাসে ভালোভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। শাবানের প্রস্তুতি ভালো হলে রমজান বেশ ফলপ্রসূ ও আমলমুখর হবে ইনশাআল্লাহ। ফলে সারাটা বছর রমজানের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির জীবনে ও যাপনে পরিলক্ষিত হবে।
মহান আল্লাহ শাবান মাসকে আমলময় করার তাওফিক দান করুন। শাবানের প্রস্তুতির মাধ্যমে রমজান কাটানোর সৌভাগ্য দিন।
Discussion about this post