কাজী ফারজানা আফরীন
পবিত্র কোরআনে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পাপাচারে লিপ্ত এবং সীমালঙ্ঘনকারী জাতিগোষ্ঠীকে আল্লাহপাক অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে থাকেন।
পৃথিবী সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ, যেখানে জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় সব উপাদান রয়েছে। যেমন—বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু, পানি, আলো, সূর্য, ওজোনস্তর, পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। কারণ, পানি হলো জীবন ও প্রাণের আদি উৎস। আমরা সাধারণত পৃথিবী স্থিত প্রাকৃতিক উৎস যেমন বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, ঝরনা, হ্রদ, ভূগর্ভ ইত্যাদি থেকে পানি পেয়ে থাকি। আবার মেরু অঞ্চল ও সুউচ্চ পর্বতমালায়ও বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণ মিঠাপানি সঞ্চিত আছে। আর পৃথিবীর প্রায় ৯৭ ভাগ পানি সমুদ্র ও মহাসমুদ্রে সঞ্চিত আছে, যা লবণাক্ত। পৃথিবীতে বাষ্পীভূত হওয়া পানির ৮৬ শতাংশই সমুদ্রের পানি, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা শীতল রাখতে অবদান রাখে। ভূপৃষ্ঠের তিন-চতুর্থাংশ পানি বিভিন্ন রূপে থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীতে পানির সামঞ্জস্য কখনো ব্যাহত হয় না। কারণ, প্রাকৃতিক রূপান্তরের মাধ্যমে পানি চক্রাকারে ক্রমাগত সঞ্চরণশীল।
মহাকৌশলী আল্লাহর সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার বিস্ময়। পানি আল্লাহর বিস্ময়কর এক নেয়ামত, রবের পক্ষ থেকে ভালোবাসা ও রহমতের নিদর্শন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে পানির উৎস তথা বৃষ্টি, নদ-নদী ও সমুদ্রের অপরিহার্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন; এরপর পৃথিবী সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৬৩)
বৃষ্টির পানির পবিত্রতা ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি পবিত্র পানি। তা দিয়ে মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করা এবং আমার সৃষ্ট বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করানোর জন্য।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৮-৪৯)
মেঘ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণের মাধ্যমে মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনরুজ্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; তাতে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৪)
অন্যত্র এসেছে, ‘আর তিনি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)
পৃথিবী বাসযোগ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘বলো তো, কে পৃথিবীকে বাস-উপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তার স্থিতির জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন?’ (সুরা নামল, আয়াত: ৬১)
বৃষ্টির পানি নদী-সমুদ্র ও ভূগর্ভে সংরক্ষণের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারি বর্ষণ করি, তারপর তা ভূমিতে সংরক্ষণ করি। নিশ্চিত জেনো, আমি তা অপসারণ করতেও সক্ষম।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১৮)
Discussion about this post