শিক্ষার আলো ডেস্ক
পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত।
মহান আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।
পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত। পবিত্র শবে কদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করবেন।
শবে কদর মুসলিম জাতির প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে শবে কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍ تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍسَلٰمٌ ۟ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ
‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : ১-৫)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজানে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই প্রকৃত কল্যাণ বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসাঈ ২১০৮)
শবে কদরের বরকত পেতে ইসলামিক স্কলাররা কিছু আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন-
দেহমনের পবিত্রতা
আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভের অন্যতম শর্ত হলো, শারীরিক ও আত্মিকভাবে পবিত্রতা লাভ করা। পুতঃপবিত্র মহান আল্লাহ অপবিত্রতা পছন্দ করেন না। এ জন্য ইসলামি শরিয়তে নামাজসহ বহু ইবাদতের জন্য পবিত্রতাকে শর্ত করেছেন। আত্মিক ও দৈহিক পবিত্রতার ব্যাপারে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন। তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা বাকারা : ২২)
বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি লাইলাতুল কদর কবে, সেটা জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী করব?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি বলো-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি ৩৫১৩)
আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা
শবে কদরের বরকত লাভে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করবে। তা এভাবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং আমাকে মহিমান্বিত রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে, আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে।’ (বুখারি ৭৪০৫)
কোরআন তেলাওয়াত করা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদার সঙ্গে কোরআন নাজিলের বিষয়টি সম্পর্কিত। তাই বুজুর্গ আলেমদের মতে কদরের রাতে কোরআন তেলাওয়াত করা তাৎপর্যপূণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর: আয়াত ১-৩)
নবিজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ দোয়া কবুলে সহায়ক। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ না করা হলে সেই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যে স্থগিত থাকে। সেই দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না।’
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়
তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন)। রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি ২০২৪)
ইতেকাফ
ইতেকাফ শবে কদরের বরকত পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। কেননা, ইতেকাফকারী জাগতিক সব ব্যস্ততা পেছনে ফেলে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।’ (বুখারি ২০২৬)
Discussion about this post