ক্বারি মাওলানা মুহা. আমানুজ্জামান
রমজান একটি পবিত্র মাসম আত্মশুদ্ধির মাস। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। মুমিনের জন্য একটি ইবাদতের মৌসুম। এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। একটি নেক আমলে সওয়াব দেওয়া হয় ৭০টি নেক আমলের। যেমন একটি নফলে একটি ফরজের সওয়াব, একটি ফরজে ৭০টি ফরজের সওয়াব আল্লাহ দান করেন।
এ মাসের মার্যাদা ও মাহাত্ম্য বলার অপেক্ষা রাখে না। এ মাস আল্লাহর অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম। প্রত্যেক মুমিনের উচিত পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে এর যথাযথ কদর করা।
কুরআন ও হাদিসে বিস্তৃত বর্ণনায় এর গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি রমজান বা সিয়াম পালন করা। তবে রমজান মাসেও সব ফরজ ইবাদতের মধ্যে নামাজই সবচেয়ে অগ্রগণ্য। নামাজ ইমানকে মজবুত করে। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ করা ও রমজান মাসে রোজা পালন করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ইমানদার, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) অবলম্বন করো। (সূরা বাক্বারা-১৮৩)
আর যখন রমজান মাস এলো তখন বললেন, তোমাদের জন্য বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। আর শয়তানকে শেকলে বন্দি করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, পবিত্র রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। (সুরা বাক্বারা-১৮৫)
রাসূল (সা.) বলেন, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার থেকে একটি করে দোআ কবুল করেন।
এ মাসের প্রতি রাতে জিব্রাইল (আ.) আগমন করতেন এবং রাসূল (সা.)কুরআন তেলওয়াত শোনাতেন।
হাদিসে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) এক আনসারি নারীকে বলেন, রমজান মাস এলে তুমি ওমরা করবে। কেননা এ মাসে একটি ওমরা একটি হজেরর সমান। তাই রমজান মাসে আমাদের বেশি বেশি ওমরা করা উচিত।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল (স:) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মুছে দেয়, যদি সে যদি কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। তাই তওবাহ করলে সব গুনাহ মাফ করার এক সুবর্ণ সুযোগ এই রমজান মাস।
রাসূল (সা:) আরো বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অনুরূপ যে তারাবি আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
হাদিসে রয়েছে, মহান আল্লাহ তাআলার কাছে রোজাদারদের মুখের গন্ধ মিসকের সুবাসের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। আর রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন রোজাদাররা জান্নাতের রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এখান থেকে প্রবেশ করতে পারবে না। মহান আল্লাহ তাআলা এই রমজান মাসেই একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম (লাইলাতুল কদর)। যার দ্বারা ইবাদতের দিক থেকে বহুগুণে অগ্রসর হওয়া যায়। আর শেষ দশকে রয়েছে ইতিকাফ।
পরিশেষে বলা যায়, রমজানের মার্যাদা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না, তাই এ মাসের সময়গুলো যতটা শুধু আল্লাহর সান্নিধ্যে কাটানো যায় ততটাই কল্যাণ। সুতরাং পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করাই যেন সবার রোজা রাখার উদ্দেশ্য হয়। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত ও রহমত লাভ করার তাওফিক দান করুন।
Discussion about this post