মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জাহান্নামের সব কয়টি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের সব কয়টি দরজা খুলে দেওয়া হয়। একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণকামী, অগ্রসর হও এবং হে মন্দপ্রত্যাশী, সংযত হও। (রমজানের) প্রতি রাতে আল্লাহ কিছু জাহান্নামিকে মুক্তি দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪২)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায় এমন কাজে মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতি ইফতারের সময় অর্থাৎ প্রতি রাতে বেশসংখ্যক লোককে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)
সুতরাং মুমিনের উচিত জাহান্নাম থেকে মুক্তির আমলগুলো বেশি বেশি করা। হাদিসে বর্ণিত জাহান্নাম থেকে বাঁচার আটটি আমল বর্ণনা করা হলো—
১. নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমান : মুমিন যখন তার ঈমানের ব্যাপারে নিষ্ঠা অর্জন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বলে এবং মারা যায়, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২২)
২. যথাযথভাবে রোজা পালন করা : যথাযথভাবে রোজা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যার মাধ্যমে বান্দা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করে।’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৮৩৮৬)
৩. নামাজে যত্নশীল হওয়া : ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। নামাজের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ নামাজি ব্যক্তির জীবন-জীবিকা প্রশস্ত করে দেন এবং মানবিক ত্রুটিমুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন তাকবিরে উলার সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে দুটি মুক্তি দান করবেন : জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিফাক থেকে মুক্তি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১)
৪. আল্লাহর ভয়ে কান্না করা : আল্লাহর ভয়ে কান্নাকারীকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কান্না করে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না, যতক্ষণ না স্তন থেকে বের হওয়া দুধ তাতে পুনরায় প্রবেশ করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৩)
৫. দ্বিনি কাজে মগ্ন হওয়া : যারা দ্বিন ও ইসলামের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে, জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে ধুলাধূসরিত দুই পা জাহান্নামের জন্য হারাম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩২)
৬. আচার-আচরণ সুন্দর করা : উত্তম চরিত্র মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মুমিন ব্যক্তি সমাজের সবচেয়ে চরিত্রবান ও আচার-ব্যবহারের অধিকারী। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও নিকটবর্তী হয় আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ৪৩৫)
৭. সকাল-সন্ধ্যা জিকির করা : আল্লাহর জিকির তাঁর রাগ ও ক্রোধ প্রশমিত করে এবং বান্দার সঙ্গে তাঁর নৈকট্য বৃদ্ধি করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুমিনদের সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবিহ পাঠ করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সকালের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরকারীদের সঙ্গে বসা আমার কাছে বনি ইসমাইলের চারজন দাস মুক্ত করা এবং তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে ১২ হাজার করে দিয়্যত (রক্তপণ) আদায় করার চেয়ে প্রিয়। আর আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জিকিরকারীদের সঙ্গে বসা আমার কাছে চারজন দাস স্বাধীন করার চেয়ে প্রিয়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৬৯)
৮. মানুষের সম্মান-সম্ভ্রম রক্ষা করা : অনুপস্থিতিতে কোনো মুমিনের মান-সম্মান নষ্ট করলে আল্লাহ যেমন ক্ষুব্ধ হন, তেমনি তা রক্ষা করলে তিনি খুশি হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনুপস্থিতিতে তার ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করে, তার জাহান্নাম থেকে মুক্তি আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭২২১)
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
Discussion about this post