নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় তিন মাস যাবৎ অসংখ্য মূল্যায়ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশ্বখ্যাত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেশনাল পাবলিক স্পিকিং ট্রেইনার হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন বাংলাদেশের আনিকা সুবাহ্ আহমেদ উপমা। তিনি উপমা আহমেদ নামে বহুল জনপ্রিয়। গত ২৪ জুলাই, ২০২০- এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ঢাবির এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংগঠিত পাবলিক স্পিকিং প্রফেশনাল ট্রেইনিং কোর্সে প্রায় ৯৭ শতাংশ গ্রেড নিয়ে এ অর্জন উপমা আহমেদের।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগে একজন লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে করপোরেট ইংলিশ ট্রেইনার হিসেবে পাবলিক স্পিকিং এবং কমিউনিকেশনস স্কিলস নিয়ে বিজিবি, বাংলাদেশ পুলিশ, টিচার্স ট্রেইনিং এবং বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ট্রেইনিং দিয়েছেন এই মেধাবী তরুণী।
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের একজন রিসোর্স পারসন হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তরুণ নেতৃত্ব প্রদানকারী খ্যাতনামা সামাজিক সংগঠন ইভোল্যুশন-৩৬০ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বাংলাদেশের এই গ্লোবাল গুডউইল অ্যাম্বাসেডর এবং ইউ এন উইমেনের একমাত্র বাংলাদেশি চ্যাম্পিয়ন উপমা আহমেদ।
আনিকা সুবাহ আহমেদ উপমার জন্ম ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। তার নামেই তাদের বাড়ির নাম রেখেছেন বাবা-মা। বাবা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। মা নাজমা খানম উদ্যোক্তা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ির নাম ‘উপমা কটেজ’। একমাত্র ছোট ভাই মাহাথির আহমেদ। মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বড় বোনের মতো মেধাবী। উপমা প্রাইমারি পর্যন্ত পড়েছেন লিটল জুয়েলস স্কুলে, পুরানা পল্টনে। কোনোকিছু বোঝার আগে তার গণমাধ্যমে শুরু। সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে স্কুল, কলেজ করেছেন। গানের ক্লাস ও নাটকের শুটিং করেছেন। অভিনয় ও বিজ্ঞাপন করেছেন ৭ থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত। পরে এ শখটি হলো তার জীবনের নেশা। পড়েছেন মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি মাধ্যমে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। পড়ালেখার প্রতি সারাজীবন প্রবল ঝোঁক। ভালো লাগে পড়তে। ছোটবেলায় দিনে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পড়ালেখা করেছেন। ভালো ফলাফল, শ্রেণিতে মনোযোগে খুব চেষ্টা ছিল। স্কুলে ছিলেন সবার সেরা। বলা হতো, ‘ফার্স্ট গার্ল’। নানা ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ার শুরু। গণিত অলিম্পিয়াড, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। সহশিক্ষা ও সমাজসেবার শুরু হয়েছে। গান, নাচের প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিয়েছেন। ঢাকার শিশু একাডেমিতে নজরুলগীতি শিখেছেন। স্কুলে ইংরেজি বিতর্কে ‘বেস্ট স্পিকার’, ইংলিশ অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন। বিখ্যাত ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় গান, আবৃত্তি, অভিনয়ের বেশকটি বিভাগে পুরস্কার জয় করেছেন। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে প্রতিযোগিতার এ বিভাগগুলোতে ফাইনালিস্ট ছিলেন। গানে ২০০৪ সালে ষষ্ঠ হয়েছেন। একই বছর আবৃত্তিতে নবম। অভিনয়ে পঞ্চম হয়েছেন ২০০৫ সালে। বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নানা বিভাগে জয়লাভ করেছেন। প্রতি বছর ফলাফলে প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি বছর। সাধারণ জ্ঞান, ইসলামি সাধারণ জ্ঞান, গান, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি ও ইংরেজি বিষয়ে শ্রেণিতে সর্বোচ্চ নম্বরের সেরা পুরস্কর– এগুলো ছিল তার বাধা।
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছেন বিখ্যাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কলেজেও ‘ফার্স্ট গার্ল’ ছিলেন। পুরো কলেজে সব বিভাগের মধ্যে সেরা ফলাফল ও সহশিক্ষায় প্রথম হন হেড গার্ল। পরের তিনজন অ্যাসিসট্যান্ট হেড গার্ল। উপমা আহমেদ ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের অ্যাসিসট্যান্ট হেড গার্ল (সহকারী প্রধান বালিকা) ছিলেন। বিজ্ঞানের এ ছাত্রী গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ নিয়ে পাস। এসএসসিতেও তাই ছিল ফলাফল। তুমুল মেধাবী মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অনার্স, মাস্টার্স। অনার্স পাস করেছেন ২০১৮ সালে। ৪ সিজিপিএর মধ্যে ৩.৫। মাস্টার্সের ফলাফল এখনো দেওয়া হয়নি। এখন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (সিইউবি) ইংরজি বিভাগের তিনি প্রভাষক। ভবিষ্যতে সমাজের ভালো ও বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভালো অবস্থান গড়ে দিতে আমাদের যুবসমাজকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন স্কিলের পাশাপাশি যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হলো প্রেজেন্টেশন স্কিল বা পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা। এজন্য এই পাবলিক স্পিকিং স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চাই, যেন আমাদের দেশের যুবসমাজ নিজেদের আন্তর্জাতিক আঙিনায় উপস্থাপন করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্দেশেই একটি অনলাইন কমিউনিকেশন স্কিলস ট্রেইনিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে, যার রেজিস্ট্রেশন চলছে এবং যেখানে অংশগ্রহণকারীরা পাচ্ছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু পাবলিক স্পিকিং রিলেটেড সামগ্রী।’
Discussion about this post