শাহেদ শফিক
মশা থেকে রক্ষায় নতুন ব্যবহারিক একটি ওষুধ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের এক তরুণ শিক্ষার্থী। এইচ এম রঞ্জু নামের ওই শিক্ষার্থীর দাবি, তার দীর্ঘ এক বছরের গবেষণায় তৈরিকৃত ওষুধটির প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হয়েছে। দুর্গন্ধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ওষুধটির ব্যবহারে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এর ফলে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় ওষুধটির আরও বিষদ পরীক্ষা ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য তিনি সরকার বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
তৈরিকৃত মশার বিরুদ্ধে কার্যকরি এই লিকুইড ন্যাচারাল ও কেমিক্যালের সমন্বয়ে তৈরি। এর কেমিক্যাল উপাদানগুলো প্রতিনিয়তই স্যানিটাইজার, কসমেটিকস ও ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে জানান রঞ্জু। ঘন তরল পদার্থ হওয়ায় এটা শরীরে মাখলে দীর্ঘসময় কার্যকর থাকে। এর উপাদানগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম হচ্ছে কেমিক্যাল। এর উপাদানগুলো হচ্ছে সোডিয়াম লরাইল সালফেট, ইথাইল ল্যাকটেট, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, গ্লিসারিন ও পারফিউম। দ্বিতীয় উপাদান হচ্ছে ন্যাচারাল। এগুলো হচ্ছে মারগোসা ওয়েল, লেমন সাইট্রাস, পেপারমিন্ট ও ক্লোভ ওয়েল। এছাড়াও রয়েছে ইনার্ট ইনগ্রেডিন্ট যা মশার বিরুদ্ধে কার্যকরী। এই উপাদানগুলোর সঠিক অনুপাতে তৈরি ওষুধটি নিরাপদে মশা প্রতিরোধ করবে বলে জানান এই গবেষক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগে একটি প্ল্যান্টও তৈরি করেছেন রঞ্জু।
তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর আমাদের দুই সিটি করপোরেশন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মশা দমাতে তারা নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনার কথা জানায়। কিন্তু তবুও মশার দমন যেন অসাধ্য হয়ে পড়ে। তখন থেকেই ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকি। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী উপায় হিসেবে মশা যেন না কামড়ায় সেই পদ্ধতি নির্বাচন করি। সেই থেকেই কেমিক্যাল ও ভেষজসহ সব উপাদান নিয়েই গবেষণা করতে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমি এমন ধরনের কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করতে থাকি যা আমাদের ত্বকের জন্য সহনীয় ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। সবশেষে আমার এই ওষুধটিতে কেমিক্যাল এবং ভেষজ উভয় উপাদানই ব্যবহার করা হয়েছে। এই ওষুধের কার্যকরী দিক হচ্ছে এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটা ব্যবহারে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মশা থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ফাংগাস ও ছত্রাক সংক্রমণ রোধ করতে পারবে।
ওষুধটি উদ্ভাবনের পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেকবার এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করেছেন বলে জানালেন রঞ্জু। জানান, এর বহুল ব্যবহার বিধিমালা নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাব ও কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ দ্বারা আরও প্রমাণাদি সংগ্রহ চলছে। খুব শীঘ্রই এটা কয়েল বা অ্যারোসলের বিকল্প ওষুধ হিসেবে পরিগণিত হবে মনে করছে এই গবেষক। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী এই ওষুধ এখন পর্যন্ত উৎপাদিত হওয়া সবচেয়ে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ।
রঞ্জু বলেন, উন্নত বিশ্বে কয়েল ব্যবহার সীমিত। এটা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি ব্যবহার হয়। সাধারণত একটা মশার কয়েলে যে পরিমাণ ফুসফুস ইনফেকটেড হয়ে থাকে তার সমপরিমাণ হতে উচ্চ মাত্রার নিকোটিন সমৃদ্ধ কয়েকটা সিগারেট দরকার। এর ধোঁয়া শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আর স্প্রে (অ্যারোসল) এটাও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এই গবেষক আরও বলেন, আমার তৈরি করা এই ওষুধটি এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের শরীরে ব্যাবহার করা করা হয়েছে। তাতে সন্তোষজনক ফলাফল এসেছে। বাজারে প্রচলিত কয়েল বা স্প্রে থেকে এই ওষুধটি স্বাস্থ্যসম্মত ও সাশ্রয়ী মূল্যের হবে।
Discussion about this post