বর্জ্য দিন, গাছ নিন’—স্লোগানটিই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যথেষ্ট। তবে খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিবিএর চতুর্থ বর্ষে পড়া তানভীর আহমেদের কার্যক্রমটিও কম আকর্ষণীয় নয়।বাসা, দোকান, হোটেল, হাসপাতালসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে তার বিনিময়ে আম, লিচু, অ্যালোভেরাসহ বিভিন্ন রকম ঔষধি গাছ বিতরণ করেন একদল তরুণ। এমন অভিনব ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছেন খুলনা নগরীর কিছু শিক্ষার্থী। যেখানে–সেখানে পড়ে থাকা বর্জ্যে আর দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে চলতে সবার মতো তাঁরও খুব বিরক্ত লাগত।
ভাবলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছু করা যায় কি না। অপচনশীল বর্জ্য কিনে নিয়ে বিক্রি করলে কেমন হয়? একদিকে পরিবেশের উন্নয়ন, অন্যদিকে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়ার আশায় বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করলেন। প্রথম দিকে পাঁচ বন্ধু তানভীরের সঙ্গে থেকে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইজি ডোর’ নামের সংগঠনটি। পরে চাকরির সুবাদে অনেকে সরে গেলেও তানভীর রয়ে গেছেন ইজি ডোরকে কেন্দ্র করে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে। ইজি ডোর সদস্যদের গায়ে টি–শার্টে লেখা থাকে ‘বর্জ্য দিন, গাছ নিন’।
সংগঠনটির ফেসবুক পেজে প্রচার হয় বিভিন্ন পোস্ট। যেমন: অপচনশীল বর্জ্য যেখানে সেখানে না ফেলে নির্ধারিত স্থানে রেখে দিন, আমাদের কল করুন, আমরা আপনার অপচনশীল বর্জ্যের বিনিময়ে গাছ কিংবা নগদ অর্থ প্রদান করব।
দেশকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখাই এই সংগঠনের উদ্দেশ্য। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ওপেন দ্য ডোর টু উইন দ্য ফ্লোর’ এবং ‘শহরকে পরিষ্কার রাখুন, ইজি ডোরের সঙ্গে থাকুন’ এই প্রত্যয় নিয়ে ইজি ডোর ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠনটি কাজ করে চলেছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে। পেপার, প্লাস্টিক, কার্টনসহ অপচনশীল সব বর্জ্যই সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন তাঁরা। শুরুতে শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম প্লাস্টিক পণ্য নিয়ে গাছ দেওয়ার ব্যাপারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরি ও বাগান করায় জনগণকে উৎসাহিত করিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
প্রায় ৫০ হাজার জনবসতির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি এখন নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডেও চলছে ইজি ডোরের কার্যক্রম। এই কর্মযজ্ঞে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত আছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। শুধু গাছই নয়, বর্জ্য যিনি দিচ্ছেন, তাঁর পছন্দানুযায়ী সার, মাটি, কীটনাশক এমনকি বাগান করার উপযোগী নানান উপকরণও থাকে বিনিময় পণ্যের তালিকায়। এ ছাড়া সচেতনতার জন্য মানববন্ধন, র্যালি ও ক্লাইমেট স্ট্রাইক করেছে সংগঠনটি। ইজি ডোরের দুটি অংশের মধ্যে এটি একটি অংশ। অন্য আরেকটি অংশের কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যবসায়িক।
তানভীর বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাই প্লাস্টিকের পণ্য পুনঃউৎপাদন ও পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করার ইচ্ছা আছে। সেই ইচ্ছা সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। আর এলাকার লোকজনের হাসিমুখ প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। যেখানে–সেখানে ফেলে না দিয়ে কেউ ফোন করে যখন বাসা বা অফিস থেকে বর্জ্য নিয়ে যেতে বলে, তখন মনে হয় পরিবেশ ও সমাজের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে পেরেছি।’
Discussion about this post