শিক্ষার আলো ডেস্ক
সকলের প্রিয় মুখ চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট শামসুন্নাহার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশির উদ্দিন। গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লোকদের কাছেও এখন সে প্রিয়মুখ। বর্তমানে তিনি উড়োজাহাজের মালিক। আর মেধা আর যোগ্যতার স্বাক্ষরও রেখেছেন সেই শিক্ষার্থী। তার ইচ্ছেটা অনেকটাই পাগলামি হলেও তিনি করে দেখিয়েছেন চার বছর সাধনা করে তার সাফল্য। মাথা ও বুদ্ধিও খাটিয়েছেন বেশ। চমক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলের কাছে। টানা চার বছর এনিয়ে নানান গবেষণা ও সাধনা করে অবশেষে সফল হয়েছেন উড়িয়েছেন তার উড়োজাহাজ আকাশে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আশিরের ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে ছিল বিস্তর আগ্রহ। ছিল উদ্ধাবনী চিন্তা-ভাবনাও। খেলতে খেলতে স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে ‘বিজ্ঞানী’ হবেন। সেই ইচ্ছের জোড়েই বর্তমানে একজন বিজ্ঞানীতে পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মো. আশির উদ্দিন নামের এই শিক্ষার্থী। চার বছরের সাধনায় ইতোমধ্যে তিনি তৈরি করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মডেলে নয় ধরনের উড়োজাহাজ। যা এলাকা নয় গোটা চট্রগ্রামে সারা জাগিয়েছেন। সেই মেধাকে সত্যিকারে লালন করা হলে দেশের সম্পদ হতে পারে আশির।
উপজেলার পুইছড়ি ইউনিয়নের ছমদ আলী সিকদার পাড়া এলাকার মো. শাহাব উদ্দিনের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় আশির। ২০১৫ সালে পুইছড়ি ইজ্জতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৮ সালে মাস্টার নজির আহমদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এই শিক্ষার্থী। পরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট শামসুন্নাহার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। বর্তমানে সেখানে ডিপ্লোমা কোর্সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হিসেবে অধ্যয়নরত আছেন।
এদিকে মহামারি করোনা শুরু হলে নিজ বাড়িতেই কাটিয়েছেন অধিকাংশ সময়। আর এই সময়ের মধ্যে আশির উদ্দিন তাঁর স্বপ্ন পূরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কারও কাছে প্রশিক্ষণ নেননি তিনি। তবু নিজে নিজে তৈরি করলেন একাধিক উড়োজাহাজ। যা রীতিমত আকাশে উড়ছে। আশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে চিন্তা করতাম। আমার বাসার ছাদের ওপর দিয়ে যখন বিমান যেত, আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম। সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম, আমি একটা বিমান বানাতে চাই, হে আল্লাহ আমার স্বপ্ন সত্যি করে দাও।
পরে পরিবারের দেওয়া বিভিন্ন সময়ের হাত খরচের টাকা দিয়ে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র কিনি। আলোচিত নানা মডেলের বিমান নিয়ে তা বানানোর স্বপ্ন দেখি। প্রথমে তৈরি করার পরে নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে নিজের বানানো শতাধিক উড়োজাহাজ ক্রাশ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে প্রথম বিমান তৈরির স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নেয়।’ আশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিগত বছরে আমার তৈরি বিমান আকাশে উড়াতে দেখে এলাকার মানুষ ও বন্ধুরা আমাকে আরও বেশি উৎসাহিত করে।
এরপর একে একে ড্রিম লাইনার ৭৮৭, ইউএস বাংলা, এমকিউ ড্রোন, মিগ ২৯, হেলিকপ্টার, এয়ার বোট, লায়ন ইঞ্জিন, ড্রিল মিসটন, ওয়েদার পাম্প বানাতে সক্ষম হই। এসব উড়োজাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আশেপাশে উড্ডয়ন করে সফলতা পাই। এসব দেখতে আসা ব্যক্তি ও বন্ধুদের কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে ৫০ থেকে ৬০টি উড়োজাহাজ বিক্রি করেছি আমি।
তরুণ বিজ্ঞানী আশির বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি যাত্রীবাহী বিমান বানাব। সে বিমানে আমি নিজেও যাত্রী হয়ে ঘুরতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা। এসব কাজ করার জন্য আমি কারো থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা নেইনি। এটা ছিল আমার গবেষণা। এ কাজ আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ স্থানীয় জমিদার হিসেবে পরিচিত আশিরের বাবা মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে আশির বড়। আমার বড় ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে আমি খুশি। তবে এটা যাতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং কাজ করতে পারে তার জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’ আশির বলেন আমি এই কাজ বাণিজ্যিক ভাবে করতে চাই। তাই এ ব্যাপারে যারা উৎসাহী আছেন আদের সহযোগিতা পেলে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
Discussion about this post