শিক্ষার আলো ডেস্ক
তাহিয়াতুল জান্নাতের নারীদের সুরক্ষার প্ল্যাটফর্ম ‘নন্দিতা সুরক্ষা’ সংস্থার শুরুটাও ছিল অনেক বাধা আর প্রতিবন্ধকতায় ভরা। তবে এটিই তাহিয়াতুলকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মান।যেহেতু বডি শেমিং, মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, নারীর প্রতি সহিংসতার মতো বিষয়গুলো এখনো আমাদের সমাজে উপেক্ষিত। এমনকি এগুলো নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকেও প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
তবে এবছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের ফটোসাংবাদিকদের রিপেল ইফেক্ট ইমেজেস এর ‘ফোর্সেস অব ন্যাচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সেই তাহিয়াতুল। যুক্তরাষ্ট্র, কেনিয়াসহ ১২টি দেশের নারীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য এ সম্মান বয়ে এনেছেন তিনি।
গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় অনলাইনে ‘ফোর্সেস অব ন্যাচার’ পদক বিজয়ী তাহিয়াতুলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে তাহিয়াতুল বলেন, ‘সমাজের জন্য দায়বদ্ধতা থেকে কাজ শুরু করেছিলাম। তবে এই পুরস্কারটি আমার জন্য অনেক স্পেশাল। এছাড়াও যেসব নারীদের জন্য আমি কাজ করি তাদের জন্যও এটা অনেক বড় একটি অর্জন। এখন নারীদের নিয়ে আরো বড় পরিসরে কাজ করার দায়িত্ব কাঁধে চেপে বসেছে।’
বর্তমানে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়াশুনা করছেন তাহিয়াতুল। আর স্বেচ্ছাসেবী কাজগুলো শুরু করেছিলেন ২০১৬ সাল থেকে। মাসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে একসময় গড়ে তোলেন ‘নন্দিতা সুরক্ষা’ নামের সংগঠনটি। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এটি। হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য হাসিমুখ পাঠশালা নামের একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই পেয়েছেন ‘ফোর্সেস অব ন্যাচার’ অ্যাওয়ার্ড।
তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা খুব মসৃণ ছিল না। তাহিয়াতুল বলেন, ‘নারী হিসেবে ঘরের বাইরে কাজ করা খুব কঠিন। মফস্বলে এসব কাজ আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারওপর সেক্সুয়াল অ্যাবইউজ, মাসিক স্বাস্থ্য বা নারীর প্রতি সহিংসতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক বেশি বাধার মুখে পড়তে হয়। হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। আমাকেও প্রথমদিকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এখন সবাই বেশ প্রশংসা করছে। তবে এতদূর আসার পেছনের গল্পটা শুধু আমিই জানি।’
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তিনি একজন ‘শ্বেতী’ রোগী। এটি নিয়েও সমাজের অনেক কটুকথা শুনেছেন তাহিয়াতুল। তাছাড়া এ অবস্থায় বাইরে রোদে কাজ করলে মুখ ও শরীরে কালো দাগ পড়ে। তবে এখন এসব বিষয়গুলো কাটিয়ে ওঠতে পেরেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছি। সমাজের নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে কাজ করতে চাই।
‘নন্দিতা সুরক্ষা’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তাহিয়াতুল। তার ‘হাসিমুখ পাঠশালা’য় ফরিদপুর সদরের হরিজনপল্লির ৩৫ জন শিশু বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। নারীদের আত্মরক্ষা, শিশুদের শরীরে অনিরাপদ স্পর্শ সম্পর্কে সচেতন করা, মাসিক স্বাস্থ্য’র পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রেস্টুরেন্টে মাসিক সুরক্ষা ব্যাংক স্থাপন, বাল্যবিবাহ বন্ধসহ বিনা মূল্যে সামাজিক নানা সচেতনতামূলক কাজ করছেন তাহিয়াতুল।
Discussion about this post