শিক্ষার আলো ডেস্ক
ফেসবুকের ‘পার্টনার ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সাবেক শিক্ষার্থী আশফাক সালেহীন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ডিসিপ্লিনের ২০০৮-০৯ সেশনের ছাত্র।
বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কিভাবে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আশফাক সালেহীন বলেন, ক্যারিয়ারের একটা পর্যায়ে আমি উপলব্ধি করি যে আমি যেরকম চাই আমার কাজের যথাযথ মূল্যায়ণ হচ্ছে না। সামাজিক অবস্থানগত দিক দিয়েও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে FAANG (ফেসবুক, অ্যামাজন, অ্যাপল, নেটফ্লিক্স, গুগল) এ ঢোকা আমার জন্য অতি জরুরি। আমার লক্ষ্য ছিলো ফেসবুক, গুগল এবং এমাজন এই তিনটি কোম্পানির যে কোনো একটি থেকে অফার পাওয়া। কিন্তু আমার পথে বাধা ছিল আমার সিএসই এর একাডেমিক জ্ঞানের অভাব এবং কখনো কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং না করা। চাকরি করা অবস্থায় এইগুলো পড়াশুনা করে ঠিক করা সম্ভব ছিলো না। তাই আমি আমার তৎকালীন চাকরি ছেড়ে দেই।
FAANG এর চাকরিগুলোতে প্রোগ্রামিং জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। ইন্টারভিউতে আমাকে কিছু এলগোরিদমিক সমস্যা সমাধান করতে দেয়া হয়। মূলত সেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করার উপরই ইন্টারভিউ’র ভাগ্য নির্ধারণ করে। আমি দীর্ঘ ১.৫ বছর ডাটা স্ট্রাকচার অ্যান্ড এলগোরিদম, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সের ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলো নিয়ে একান্ত ভাবে পড়াশোনা করি। পড়াশোনার মাঝে প্রত্যেক ৩-৪ মাস পরপরই আমি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি এবং প্রত্যাখ্যান হয়েছি।
তিনি আরো জানান, প্রথমবার ফেসবুক থেকে, তারপর দুইমাসের ব্যবধানে এমাজনে দুই বার, তারপর গুগল থেকে একবার এবং শেষে এমাজন থেকে আরো একবার প্রত্যাখ্যান হয়েছি। বারবার প্রত্যাখ্যান হওয়ার পরও আমি হাল ছেড়ে দেইনি। কিছুদিন আগে আবার ফেসবুক এবং এমাজনে এপ্লাই করি। এইবার সব ইন্টারভিউ অসাধারণ হয় এবং ফেসবুক থেকে আমি খুব তাড়াতাড়ি ইমেইলে চাকরি পাওয়ার খবরটি জানায়।
এমন সফলতার পর তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন সত্যি হলো। আমার সাফল্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই খূব উৎফুল্ল এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি গুগল, ফেসবুক অথবা এমাজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী তরুণ ঢুকতে পারবে। সবশেষে একাডেমিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও একান্ত নিজের চেষ্টায় অনেক কিছুই করা যায়।
তিনি আরো বলেন, ফেসবুক, গুগল অথবা এমাজনে চাকরি পাওয়ার জন্য উচ্চ একাডেমিক ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্সের ফান্ডামেন্টাল, অলমোস্ট সব পপুলার এলগোরিদম এবং এদের ব্যবহার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এই ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। সুতরাং কেউ যদি এইসব বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজে ভালোমতো আয়ত্ত্ব করতে পারে তার জন্য উচ্চ কোন ডিগ্রির প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, আশফাক সালেহীন ২০১৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক শেষ করেন। এরপর অল্প কিছুদিন নেটওয়ার্কিং রিলেটেড চাকরি করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং করার। দুই বছর আমেরিকা বেজড কিছু ছোট কোম্পানির সঙ্গে ব্যাকএন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যানসিং করার পর তিনি থাইল্যান্ডের একটা কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর তিনি বেশ কিছু বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন।
Discussion about this post