মিনহাজ উদ্দিন
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে আমাদের নানা আইডিয়া উপস্থাপনের দরকার পড়ে। উদ্যোগবিষয়ক নানা প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করি আমরা। আর যেকোনো উদ্যোগ বা আইডিয়া প্রদর্শনের জন্য আদর্শ এক মাধ্যম স্লাইড। বিনিয়োগকারী কিংবা সম্ভাব্য অর্থলগ্নিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একঝলকে নিজের উদ্ভাবন কিংবা আইডিয়া তুলে ধরতে স্লাইড প্রেজেন্টশনের জুড়ি নেই।
কোনো আইডিয়া বা উদ্যোগে কেন একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন, তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই প্রেজেন্টেশন সহায়তা করে। দুর্বল পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার জন্য আপনার ভালো আইডিয়া বা উদ্যোগটিও মাঠে মারা যেতে পারে। যাঁরা আইডিয়া উপস্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগবিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন, তাদের কার্যকর প্রেজেন্টেশন তৈরি করা জানতে হবে।
একটি কার্যকর প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
১০ স্লাইডের প্রেজেন্টেশন
স্টার্টআপ দুনিয়ায় ১০ স্লাইডের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বেশ জনপ্রিয়। অনলাইন গ্রাফিক ডিজাইন টুল ক্যানভার চিফ ইভানজেলিস্ট, এর আগে যিনি গুগল (মটোরোলা বিজনেস ইউনিট) ও অ্যাপলের চিফ ইভানজেলিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন, সেই গাই কাওয়াসাকির তৈরি এই মডেল উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীরা ব্যবহার করেন। উদ্যোগ বা আইডিয়া প্রদর্শনের জন্য মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ১০/২০/৩০ কৌশলে প্রায় সবই উপস্থাপন করা যায়। এই কৌশলের মাধ্যমে ১০টি স্লাইড ২০ মিনিটের মধ্যে উপস্থাপন করতে হয়, যেখানে লেখার ফন্ট ৩০ পয়েন্টের মধ্যে রাখা জরুরি। বিনিয়োগ সংগ্রহ, বিক্রয় কৌশল তৈরি থেকে শুরু করে নতুন আইডিয়া, নতুন কাজের পরিকল্পনা কিংবা পার্টনারশিপ তৈরির জন্য এভাবে স্লাইড তৈরি করতে পারেন।
নমুনা হিসেবে একটি পরিবেশবান্ধব সাবান তৈরির আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক।
প্রথম স্লাইড: নাম ও পরিচিতি
প্রথম স্লাইডে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম, কিংবা ধারণার নামটি লিখতে হবে। এ ছাড়া যিনি উপস্থাপন করছেন, তার নাম-পরিচিতি, ই-মেইল ঠিকানা ও যোগাযোগের ঠিকানার উল্লেখ থাকলে ভালো হয়। প্রথমেই এই স্লাইডে সাবানের একটি নাম ও ব্যক্তি হিসেবে নিজের পরিচয় লিখব আমরা।
দ্বিতীয় স্লাইড: সমস্যা/সুযোগ
এই স্লাইডে আপনার ধারণা বা উদ্যোগ যে সমস্যা সমাধান করবে, তা সংক্ষিপ্ত আকারে লিখতে হবে। স্লাইড দেখে যেন বিনিয়োগকারী কিংবা দর্শকের মনোযোগ তৈরি হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনার উদ্যোগ সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীর জীবনের যে সমস্যার সমাধান করবে, তা বর্ণনা করতে হবে। যেমন পরিবেশবান্ধব সাবানসংক্রান্ত আইডিয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত সাবানে ব্যবহূত রাসায়নিক উপাদানগুলো কেন ক্ষতিকর, তা তুলে ধরতে পারেন।
তৃতীয় স্লাইড: ভ্যালু প্রোপোজিশন বা ধারণার গুরুত্ব
এই স্লাইডে আপনার আইডিয়া যে সমস্যার সমাধান করছে, তার গুরুত্ব বা মূল্য তুলে ধরুন। আপনি যে সুযোগ তৈরি করছেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করুন। পরিবেশবান্ধব সাবান কীভাবে তৈরি করা হবে, কীভাবে এই সাবান ব্যবহারকারী ও পরিবেশের ক্ষতি কমাবে, সে বিষয়টি আমরা উল্লেখ করব।
চতুর্থ স্লাইড: রহস্য উন্মোচন করুন
এই স্লাইডে আপনার উদ্ভাবিত পণ্য বা সেবার পেছনের আইডিয়াটির প্রযুক্তি রহস্য উন্মোচন করুন। স্লাইডে কথা কম রেখে ডায়াগ্রাম বা চার্ট বেশি ব্যবহার করুন। আপনার পণ্য বা সেবার কোনো ডেমো বা প্রোটোটাইপ, ড্রাফট বা খসড়া থাকলে এখানে উপস্থাপন করুন। একটি ডেমো সাবানের ছবি ও সাবান তৈরির প্রক্রিয়া আমরা এই স্লাইডে উপস্থাপন করতে পারি।
পঞ্চম স্লাইড: ব্যবসার ধারণা দিন
কেন একজন বিনিয়োগকারী আপনার সেবা বা উদ্যোগে বিনিয়োগ করবেন-তা এই স্লাইডে ব্যাখ্যা করতে হবে। আপনার ধারণা বা উদ্যোগ আর্থিকভাবে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা জানাতে হবে। বিভিন্ন বিজনেস মডেল প্রচলিত আছে, যেকোনো একটি আপনি বেছে নিতে পারেন। নতুন পরিবেশবান্ধব সাবানটির মাধ্যমে কীভাবে আমরা আগামী ২-৩ বছর ব্যবসা করব, কতটা বিক্রি হবে, কোন ক্রেতারা কিনবেন, তা এই স্লাইডে উল্লেখ করুন।
ষষ্ঠ স্লাইড: যেভাবে মাঠে নামবেন
এই স্লাইডে কীভাবে আপনার ধারণা বা উদ্ভাবনকে ক্রেতা বা ব্যবহারকারীর কাছে নিয়ে যাবেন, তা ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন ধরা যাক, অনলাইন ও সুপারশপের মাধ্যমে আমরা পরিবেশবান্ধব সাবানটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেব। সেটিই এই স্লাইডে তুলে ধরতে হবে।
সপ্তম স্লাইড: বাজারের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান
আপনি যে আইডিয়া বা ধারণা উপস্থাপন করছেন, তার সম্ভাব্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান বা ধারণার কথা উল্লেখ করুন। সামগ্রিকভাবে বাজারের অবস্থান তুলে ধরুন। এই স্লাইডে আমরা পরিবেশবান্ধব সাবানের অন্যান্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে তার অবস্থান তুলে ধরব। অন্য আইডিয়া কেন শক্তিশালী বা দুর্বল, তার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
অষ্টম স্লাইড: দলের পরিচয়
এই স্লাইডে আপনার আইডিয়া বা উদ্যোগের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাদের নাম ও তথ্য যুক্ত করুন। আপনার আইডিয়ার পরামর্শক কিংবা উদ্যোগের উপদেষ্টা থাকলে তাদের নাম ও পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে লিখতে হবে। পরিবেশবান্ধব সাবানের ক্ষেত্রে এই সাবান তৈরির জন্য যাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের নাম আমরা লিখব। এ ছাড়া উদ্যোগের শুরুতে নির্বাহী, কারিগরি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে যাঁরা কাজ করছেন, তাদের নাম ও পরিচয় লিখতে পারেন।
নবম স্লাইড: আর্থিক তথ্য
এই স্লাইডে আপনার আইডিয়া বা উদ্যোগের আগামী তিন ও পাঁচ বছরের ভবিষ্যত্ অবস্থান তুলে ধরতে হবে। কতজন গ্রাহক সেবা গ্রহণ করবেন, কতজন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, তা জানাতে হবে। যেমন আমাদের পরিবেশবান্ধব সাবানটি আগামী তিন ও পাঁচ বছরে কতজন গ্রাহক কিনবেন, কতজন সম্ভাব্য গ্রাহক আছেন, তা আমরা তুলে ধরব।
দশম স্লাইড: বর্তমান অবস্থা, অর্জন, পরিকল্পনা ও অর্থের প্রয়োজন
এই স্লাইডে আপনার আইডিয়া বা উদ্যোগের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। উদ্ভাবনী কোন প্রযুক্তি পণ্য হলে তার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, নতুন সেবা চালু করলে কতজন গ্রাহকের কাছে পৌঁছেছেন, তা লিখতে হবে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখতে হবে। বিনিয়োগকারীরা অর্থ কোন ক্ষেত্রে কেন ব্যবহার করবেন, তা লিখতে হবে। নমুনা হিসেবে পরিবেশবান্ধব সাবান ব্র্যান্ডের জন্য আমরা নতুন ঘ্রাণের সাবান তৈরির কথা বলতে পারি। বিনিয়োগকারীর অর্থের মাধ্যমে আমরা নতুন কারখানা স্থাপন কিংবা ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস তৈরির ধারণা দিতে পারি।
Discussion about this post