শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ ১২ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে – মাতৃ দিবস বা মা দিবস। সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তাঁর মা। সেই মায়ের প্রতি সম্মান জানাতেই দিনটি পালন করার রীতি চালু হয়েছে। আন্তর্জাতিক, মাতৃ দিবস চালু থাকলেও, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মার্চ এবং এপ্রিলের নানা সময়, মাতৃ দিবস পালন করা হয়। এবার আসুন জেনে নেই কখন এবং কেন প্রথম চালু হলো এই ‘মা দিবস’ ! কেনই বা শেষ পর্যন্ত দিবসটি পালনে বিরোধিতা করেছিলেন প্রবক্তা অ্যান জার্ভিস নিজেই !
যেভাবে এল ‘মা দিবস’
বছরের একটি দিনকে শুধু মায়ের জন্য তুলে রাখার কথা প্রথম ভাবেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড। তবে সেটাই আধুনিক মা দিবসের সূচনা নয়। আধুনিক মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকায় নারীদের স্বাস্থ্যরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। তার কাজের মূল বিষয়ই ছিল পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
এর আগে বিভিন্ন দিনের কথা জানা যায়, যেখানে মা দিবসের ধারণা রোপণ করা হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসে মা দিবসের আয়োজন হতো ঘরে ঘরে। প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’, যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশ্যে উদ্যাপন করা হতো। মা দিবস তখনো এত ব্যাপ্তি লাভ না করলেও এই ধারণাটির গোড়াপত্তন ঘটে।
আবার কথিত আছে, আজ থেকে ১৫০ বছর আগের সপ্তাহের রোববারের সকালটা অ্যান জার্ভিসের জন্য একদম অন্যরকম ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠিত সানডে স্কুলে বাচ্চাদের দিতেন বাইবেল পাঠ। এই পাঠদানকালে বাচ্চাদের জন্য তার মায়া সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার নিজের মায়ের ছবি খুঁজে ফিরতেন। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় মায়ের মুখচ্ছবিকে লালন করতে চাইলেন তিনি। এই বোধ থেকেই ১৯০৫ সালে মাকে ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে প্রবর্তন করেন মাদার্স ডে বা মা দিবসের।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সালে। কিন্তু এর প্রসার ঘটে আরও পরে। এর আগে আধুনিক মা দিবস পালনের কথা জানা যায়। মা দিবস উদ্যাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস।
প্রতি বছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতেরো শতকের কথা। মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ও অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও, জনপ্রতিনিধিসভা কংগ্রেসে একই কায়দায় প্রচার চালান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন; কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যান জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে ‘মা দিবস’টি উদ্যাপন করার জন্য। সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রোববার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদ্যাপন করলেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
আরও পড়ুনঃ বিজ্ঞানী হওয়ার গল্পে মায়ের জন্য কাঁদলেন ড. সেঁজুতি
এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কায়দায় ছুটির দিনটিকেই অন্যান্য দেশগুলো মা দিবসের দিন পালনের জন্য গ্রহণ করে। তবে, যে রাষ্ট্রগুলোর ধর্ম ক্যাথলিক, অথবা ইসলামি দেশগুলো- সেখানে ধর্মের হাত ধরে সেখানকার রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে, মা দিবস পালিত হয়। আবার, বলিভিয়ায় ওখানকার নারীরা যেদিন একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই দিনটিতে, মা দিবস পালিত হয়।
১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিসের মা মারা গেলে তার মাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে আনা জারভিস প্রথম মা দিবস পালন করেন। ১৯২০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় সব দেশে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয়।
বিভিন্ন দেশে, মা দিবস পালনের রীতি আলাদা। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে তাকে অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার এই দিনটি একটি স্বল্প-পরিচিত উৎসব। যা মূলত প্রবাসীরা পালন করেন। সেখানে এই দিনপালনকে বিদেশি সংস্কৃতি হিসেবে স্থানীয় গণমাধ্যম প্রচার করে থাকে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস’ পালন শুরু হওয়ার ন’ বছরের মাথায়, দিনটিকে বাণিজ্যিকভাবে পালন করার অভিযোগে অ্যান জার্ভিস নিজেই এভাবে, মা দিবস পালনের ঘোর বিরোধিতা করেন। শুধু তাই নয়, নিজের সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে শেষ জীবন পর্যন্ত তিনি দিনটির এমন অবমাননার প্রতিবাদ জানান।
Discussion about this post