শিক্ষার আলো ডেস্ক
গেলো মঙ্গল ও বুধবার রাস্তায় কোনো পুলিশ ছিল না। অথচ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানগরজুড়ে যানবাহন চলাচল বাড়ছিল। তাতে বিশৃঙ্খলা এবং যানজট দেখা দিলে, ছাত্ররাই নিজেদের কাঁধে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব তুলে নেন। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ‘স্টপ’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, লাঠি হাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কাজে অংশ নেন।
‘দেশ যখন আমার, সেই দেশের সড়ক পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমার’- এই স্লোগান ধারণ করে সারা দেশের সড়ক পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবারও (৮ আগস্ট) রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল সড়কে দেখা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিছু কিছু জায়গায় আনসার ও ফয়িার সার্ভিসের সদস্যদের দেখা গেছে।
ধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ভালো কাজের হোটেলসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব
রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি তারা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলো নির্দিষ্ট স্থান থামার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তারা মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাচ্ছেন।
কোনো হট্টগোল না করে শিক্ষার্থীরা হাসিমুখে কাজটি করছেন। রাজধানীর অন্যান্য পয়েন্টেও একইভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন শিক্ষক, পেশাজীবি, রাজনৈতিক নেতা কর্মী সহ সকলেই। বর্তমান সেনাপ্রধানও শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেছেন।
শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নয়, শিক্ষার্থীরা নেমে পড়েছেন সংসদ ভবনসহ অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার করার কাজেও।
একই দৃশ্য দেখা গেছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়াসহ বিভিন্ন্ নগর-মহানগরেও। পথচারী সাধারণ মানুষ এবং যানবাহন চালকরা তাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে সহযোগিতা করেন। তাদের অনন্য ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। গতকাল অবশ্য কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের দেখা যায়। একটা বিরাট পরিবর্তনের পর দেশের ক্রান্তিকালে ছাত্রদের এই দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। কয়েক বছর আগে রাজধানীতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর আরও একবার এরকম যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এই কাজে নেহায়েত অনভিজ্ঞ কিশোর-তরুণরা সেদিন অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছিলেন। সড়কে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ। এই অবস্থায় টানা তিনদিন ধরেই রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আনন্দ সহকারে কাজ করছি। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা ! মানুষ কিছুটা বিরক্তবোধ করলেও কিন্তু আমরা চাই সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা আসুক। মানুষ কিছুটা শিখে গেলে পরে এই ধারা বজায় থাকবে।
একজন শিক্ষার্থীর অভিব্যক্তি, ‘মনে হচ্ছে দেশটা আমরা নতুন করে স্বাধীন করেছি। নতুন দেশে পুলিশ নেই তাতে কি। আমরা তো আছি। আমরাই ধুয়ে-মুছে এই দেশটাকে পরিষ্কার করব। আমরাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করব। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের এই ভূমিকায় খুশি পথচারী ও গণপরিবহনের চালকরা। তারা জানান, পুলিশ নেই কিন্ত সড়কে বিশৃঙ্খলা নেই। শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাচ্ছে। খুব বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে না।
গুলিস্তান-গাজীপুরের একটি পরিবহনের চালক তৌহিদ জানান, শিক্ষার্থীরা নিয়ম করেই সিগন্যাল দিচ্ছেন। কোনো ভোগান্তি নেই।
Discussion about this post