শিক্ষার আলো ডেস্ক
আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম উপাচার্য হিসেবে আজ মঙ্গলবার বিকেলে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায়ও রাজনীতির বাইরে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। একই সঙ্গে দল-মত নির্বিশেষ সবার সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বতন্ত্র অবস্থানে ফেরাতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমি বরাবরই রাজনীতির বাইরের মানুষ। আমি শিক্ষক, গবেষণায় ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি। এখনো আমি কোনো রাজনীতি করি না। আগামীতেও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার নাম জড়ানোর ইচ্ছা নেই।’
উপাচার্য বলেন, আমার ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিই নাই। তার মানে এই নয় যে রাজনীতিবিদদের হেয় করছি, তাদের আমি সম্মান করি। কিন্তু রাজনীতি আমার সাথে যায় না। দল কেন্দ্রীক রাজনীতিতে আমার আগ্রহ শূন্য।
তিনি আরও বলেন,আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এগিয়ে নেওয়ায় আমাদের প্রধান কাজ। আমার সকল কাজ হবে ন্যায্যতা এবং নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে।এই বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। একার কারও নয়, এটা সবার বিশ্ববিদ্যালয়।
সবসময় অ্যাকাডেমিক বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ায় রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে থেকেছেন অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ। তাঁর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দেশে ও দেশের বাইরের ১৭ জন পিএইচডি গবেষক ও ৮ জন এমফিল গবেষক গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি দুই শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও বইয়ের রচয়িতা।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ
বর্ণাঢ্য গবেষণা ও কর্ম জীবন
পেশাগত জীবনে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ‘অধ্যাপক’ ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগে। ২০১২-২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি এ বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পাদন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করেছেন।
তিনি মিশরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন কায়রোতে ‘ডিস্টিংগুইসড ভিজিটিং রিসার্চার’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ‘অধ্যাপক’, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘এশিয়ান রিসার্চ ফেলো’ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভারসিটির ‘ভিজিটিং স্কলার’, ২০০৪-০৮ সাল পর্যন্ত কানাডার রয়েল রোডস ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস ১৯৯৬-৯৭ এর ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আমেরিকান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যুক্তরাজ্য সরকারের সোয়ানসি-বে রেশিয়াল ইকুইটি কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রকল্প ও কর্মসূচিতে উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক নিয়াজ সরকারের উচ্চপর্যায়ে ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়েও গবেষণা চালিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক, গবেষণা নির্দেশক ও শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে প্রধান জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি, ফরেন সার্ভিস একাডেমি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বন একাডেমি, আর্মি আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল এবং বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি আরণ্যক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান।
Discussion about this post