বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক মিলে মোট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৫৪টি। এর মধ্যে সরকারি ৪৬টি, বেসরকারি ১০৫টি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ২টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৩৭ লাখ।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সবাই ঘরবন্দি। ফলে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর মনও ভেঙে গেছে। ৩৭ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই গরিব মেধাবী। তারা জানে না কতদিন চলবে করোনার থাবা। উচ্চশিক্ষা নিয়ে গভীর হতাশায় শিক্ষার্থীরা।
কোভিড-১৯ এর মধ্যেও উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা সচল রাখার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন বাংক (এডিবি) সহায়তা প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ও ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হবে, যাতে করে সবাই ঘরে বসে ক্লাস করতে পারেন। বর্তমানে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তালিকা নেওয়া হচ্ছে। ২০ মের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প জমা দেবে ইউজিসি। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যায় ১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।
ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত সচিব) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নে আট মাস আগে একটা প্রকল্প প্রস্তুত করেছি। তখন কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারি ছিল না। তবে এখন এর ফলে শিক্ষার্থীরা লকডাউনে। এটা কতদিন চলবে জানি না। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। অনেক শিক্ষার্থী হতাশায় পড়বে। এ হতাশা থেকে তাদের মুক্তি দিতে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের আওতায় তাদের ল্যাপটপ ডিভাইস দেওয়া হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে এডিবি সহায়তা প্রকল্পসহ শিক্ষার উন্নয়নে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের পর এডিবির সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষা, উচ্চশিক্ষায় আরও বেশি সুযোগ এবং কর্মসংস্থানে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শিক্ষায় দ্রত সময়ে আরও ৫ বিলিয়ন ডলার এডিবি ঋণ আসছে। করোনা ভাইরাস সংকট না থাকলে এতদিনে নেগোসিয়েশন হয়ে যেত। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্যও ব্যয় করা হবে।’
এডিবি সূত্র জানায়, ২০২০-২০২২ মেয়াদে কান্ট্রি অপারেশন বিজনেস প্ল্যানে শিক্ষায় বাংলাদেশকে মোট ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। গুণগত শিক্ষা, উচ্চশিক্ষায় সবার সুযোগ সৃষ্টি এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে এ বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সব পরিকল্পনার ছন্দপতন ঘটেছে। ফলে কীভাবে ডিজিটাল ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে এডিবি।
Discussion about this post