কর্মী হিসেবে লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আপনার বসের জীবনকে আরো সহজ করা। আপনি যদি আপনার ম্যানেজারকে (বস) সহায়তা করতে পারেন তাদের পরিচালকদের কাছে ভালো লাগতে, তাহলে আপনিও কর্মক্ষেত্রে ভালো থাকবেন।
সুতরাং কিভাবে দ্রুত বসের মন জয় করতে পারবেন, তা নিয়েই এ প্রতিবেদন।
সারা সপ্তাহের কাজের একটি বৃত্তান্ত বসকে মেইল করুন
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কর্মস্থল বিশেষজ্ঞ লিন টেইলর বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নতুন কর্মস্থলে বসের মন জয় করার জন্য জিজ্ঞেস করুন তিনি কতদিন পর পর আপনার সম্পাদিত কাজ পরীক্ষা করতে চান। এছাড়া নিজে আগ্রহী হয়ে বসকে কাজের অগ্রগতি জানান। তাহলে আপনি কোন কাজ কতটুকু করেছেন সে বিষয়ে তিনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন।
‘বারকিং আপ দ্য রং ট্রি’ বইয়ের লেখক এরিক বারবারের পরামর্শ হচ্ছে, চলতি সপ্তাহে কি কি কাজ শেষ করেছেন তার একটি ছোট্ট বৃত্তান্ত সপ্তাহান্তে বসকে মেইল করুন।
কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে জানান
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ও অ্যাপলের সাবেক কর্মী কিম স্কট বলেন, প্রত্যেক ম্যানেজার তার কর্মীদলের কাজে অগ্রগতি নিয়মিত জানতে চান। সুতরাং কর্মীদের উচিৎ বিনয় ও সততার সঙ্গে বসকে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো। তিনি আরো বলেন, অগ্রগতি বিষয়ে আপনার সৎ উত্তর হয়তো বসের দুশ্চিতা বাড়াতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বসের জীবনকে আরো সহজ করতে চান, তাহলে নীরবে অপেক্ষা করবেন না। এমন সব দিকের কথা ভাবুন যেখানে কর্তৃপক্ষের উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে এবং গঠনমূলক সমালোচনা করুন।
নিজের পেশগত লক্ষ্যের ব্যাপারে বসকে অবগত করুন
ক্যারিয়ার বিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দ্য মিউসের ভাইস প্রেসিডেন্ট টনি থম্পসন বলেন, ‘পেশাগত জীবনে নিজেকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান সে ব্যাপারে বসের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করুন। তাহলে ঊর্ধ্বতন বস আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনি ততক্ষণ কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি পাবেন না, যতক্ষণ আপনার বস আপনার পেশাগত জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে না পারবেন। আপনার লক্ষ্য জানাটা বসের জন্যও সহায়ক হবে। কেমন ভূমিকা বা কেমন চ্যালেঞ্জ আপনি নিতে চান তা বসকে আর অনুমান করতে হবে না এবং তিনি সম্ভাব্য সেরা টিম গঠন করতে পারবেন।’
গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টগুলোতে ভূমিকা রাখুন
প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টগুলোতে ভূমিকা রাখতে চেষ্টা করুন। যদি সেগুলো আপনার কর্ম পরিধির আওতায় নাও পড়ে। এটাই বসের কাছে প্রতিষ্ঠানের আর দশজনের থেকে আপনাকে আলাদা করে উপস্থাপন করবে। টেইলর বলেন, ‘কর্মী হিসেবে আপনার সুনাম তখনই ছড়িয়ে পড়বে যখন আপনি কাঙ্ক্ষিত কাজ সম্পর্কে নিজের দক্ষতা নিশ্চিত করবেন এবং নিজের সাধ্যের বাইরের কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।’
বসের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আগ্রহ দেখান
ক্যারিয়ার বিষয়ক পোর্টাল লার্নভেস্টের ফ্রিল্যান্স লেখক সিলিয়া সার্টজম্যান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে বসের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আগ্রহ দেখান। যেমন- বসের সাপ্তাহিক ছুটির দিন কেমন কেটেছিল বা তার ছেলেমেয়ের স্কুল কেমন চলছে ইত্যাদি।
এই অভ্যাস আপনাকে আপানার বসের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের বাইরে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।- বলেন ‘গ্রেট অন দ্য জব: হোয়াট টু সে, হাউ টু সে ইট: দ্য সিক্রেটস অব গেটিং অ্যাহেড’ বইয়ের লেখক জোডি গ্লিকম্যান।
কিছু বিষয়ে বসের পরামর্শ জানতে চান
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বসের কাছে পরামর্শ জানতে চাওয়ার কারণে আপনাকে বেশি দক্ষ বলে মনে করতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বসের মতামত জানতে চাওয়ার চেয়ে ভালো হচ্ছে বসের পরামর্শ জানতে চাওয়া। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট কিয়ালদিনি বলেন, বসের কাছে পরামর্শ জানতে চাওয়াটা বস এবং আপনার যৌথতা তৈরি করে এবং আপনার আইডিয়া সম্পর্কে সাহায্যকারী মনোভাব পোষণে উৎসাহিত করে।’
কর্মস্থলে আগে পৌঁছাতে চেষ্টা করুন
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল জি. ফসটার স্কুলের গবেষকদের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মস্থলে যারা আগে পৌঁছায় তারা দেরিতে পৌঁছানোদের চেয়ে কাজ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয় এবং তাদের সফলভাবে কার্য সম্পাদনের হারও বেশি।
অফিস ছুটির পর আপনি কতক্ষণ অফিসে ছিলেন তা মুখ্য নয়, বরং অফিসে আপনি সময় মতো আসেন কিনা সেটাই মুখ্য।
আরও পড়ুন-অফিসে প্রথম ১০ মিনিটে ৯ ভুল
বসকে ধন্যবাদ দিন
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন বস যখন আপনার কোনো কাজের প্রত্যুত্তর করে সেটা যদি নেতিবাচকও হয় তাহলেও তাকে ধন্যবাদ দিন। এই অভ্যাস আপনার প্রতি বসের ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
সমস্যায় অগ্রিম সতর্ক থাকুন এবং সঙ্গে সমাধান প্রস্তুত রাখুন
মার্কিন ধনকুবের বিনিয়োগকারী ও বাস্কেটবল টিম দ্য ডালাস মেভারিকসের সত্ত্বাধিকারী মার্ক কিউবান বলেন, কর্মীদের কাছ থেকে কাজের আপডেট পেতে আমি পছন্দ করি। কিন্তু তারা যখন আমাকে কাজে আপডেট দেয় তখন খারাপ খবরটাই আগে দেয়। এটা একদম অনুচিত।
সান ফ্রান্সিসকোর খ্যাতনামা ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি উইবলি’র সিএফও জিম কাবাল বলেন, সমস্যা নয় বরং সমস্যার একাধিক সমাধান নিয়ে উপস্থিত হওয়া উচিৎ।’
তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
Discussion about this post