অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে যুক্ত হলো আরো একটি গর্বের অধ্যায়। প্রথমবারের মতো Diamond Challenge 2025-এর আন্তর্জাতিক ফাইনালে দুই কিশোর বাংলাদেশি ভাই – শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান জায়গা করে নিয়েছে।তারা একটি নতুন ও বৈপ্লবিক পানি পরিশোধন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তাদের টিম BLUESHIELD FILTER ইতোমধ্যেই বিশ্ব মঞ্চে আলোড়ন তুলেছে এবং ব্যবসায়িক উদ্ভাবন (Business Innovation) ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ৫ দলের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
৪৭টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য ও ৭৩টি দেশ থেকে ৩৩৯৮ জন তরুণ উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, যেখানে ১২০০+ দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।শুধুমাত্র ৩৮টি ব্যবসায়িক উদ্ভাবন প্রকল্প ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছে, যেখানে তাদের টিম অন্যতম।এই প্রতিযোগিতার ১২৬টি দেশের ২০,০০০+ অ্যালামনাই রয়েছে, যারা বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হিসেবে সফল হয়েছেন। তাদের টিম বর্তমান অবস্থানে শীর্ষ ৫ দলের মধ্যে রয়েছে এবং লক্ষ্য ১ম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করা। তাদের উদ্ভাবন বাস্তবসম্মত প্রয়োগযোগ্যতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই উদ্ভাবন একটি নতুন ধরণের পানি পরিশোধন প্রযুক্তি, যা সহজে বহনযোগ্য, পরিবেশবান্ধব এবং বাস্তব জীবনে কার্যকরভাবে প্রয়োগযোগ্য। এটি বিশেষভাবে বন্যাপ্রবণ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে থাকা অঞ্চলগুলোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে এখনই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, কারণ খুব শিগগিরই এই আবিষ্কারের জন্য পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হবে , তবে বর্তমানে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই ধাপটি সম্পন্ন হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পেটেন্ট আবেদন করা হবে। তাই পেটেন্ট সুরক্ষার স্বার্থে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনই গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রকল্পটি Limitless World Summit 2025-এ উপস্থাপন করা হবে, যা মে ১-২, যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে।সেখানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সফল ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং বৈশ্বিক উদ্যোক্তারাও উপস্থিত থাকবেন। সেই মঞ্চে এই উদ্ভাবনকে একটি বাস্তবসম্মত বাণিজ্যিক ও উদ্যোক্তা উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে , যা উন্নয়নশীল বিশ্বে বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শাফি বিন সুলতান বর্তমানে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং রোবোটিকসের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনগুলো থেকেই তিনি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প এবং গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে চান। তার লক্ষ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করা।
সাবিক বিন সুলতান বর্তমানে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং ব্যবসায়িক কৌশলের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দক্ষতা অর্জন করেছেন। তার লক্ষ্য ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করা।
এছাড়া, এই অর্জনের পেছনে রয়েছে তাদের বাবা, সুলতান মহিউদ্দিন ভূঁইয়া-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান, যিনি প্রতিযোগিতার প্রতিটি ধাপে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সন্তানেরা ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি আগ্রহী ছিল। তাদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রম আজকে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। আমি আশা করি, এই সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নতুন কিছু উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে।”
অপরদিকে, টিম লিডার হিসেবে শাফি বিন সুলতান বলেন, “আমরা শুধুমাত্র আমাদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরার জন্য কাজ করছি। আমাদের উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
তার ভাই সহ-উদ্ভাবক সাবিক বিন সুলতান বলেন, “আমাদের উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নই নয়, বরং এটি পরিবেশ ও মানবতার জন্য একটি সমাধান। বিশুদ্ধ পানি সংকট মোকাবিলায় এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্ব আমাদের প্রযুক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়েছে এবং আমাদের আরও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করছে।”
শাফি ও সাবিকের এ উদ্ভাবন কেবল প্রযুক্তির একটি উৎকর্ষতা নয়, বরং একটি সামাজিক উদ্যোগ যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় ভুক্তভোগী লাখো মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর হতে পারে। তাদের এ অর্জন আবারো প্রমাণ করে, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যেও রয়েছে এমন উদ্ভাবনশক্তি, যা বিশ্বমঞ্চেও আলোড়ন তুলতে সক্ষম।
Discussion about this post