আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় ভারত বাড়তি সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তও হয়েছে, সামরিক প্রয়োজনে অবকাঠামো তৈরির চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা হবে। চীনের চাপে নির্মাণকাজ বন্ধ করে পিছু হটবে না।
লাদাখে সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে গুরুত্ব দিলেও ভারত এখনো তার অবস্থানে অটল। ভারত মনে করছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা যেসব স্থানে লঙ্ঘিত হয়েছে, সেখান থেকে চীনা ফৌজ সরে না গেলে পরিস্থিতির বদল ঘটবে না।
চলতি মাসের শুরু থেকে ভারত-চীন সীমান্তের দুটি সেক্টরে উত্তেজনা ছড়ায়। ৫ মে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গালওয়ানে ভারতকে রাস্তা তৈরিতে চীনা ফৌজ বাধা দেয়। একই সময় প্যাংগং লেকে ভারতীয় টহলদারি দলকেও বাধা দেওয়া হয়। চার দিন পর ৯ মে সিকিম-তিব্বত সীমান্তে নাকুলায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সেনারা। দুই সেক্টরেই দুই দেশের সেনারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ঢিল ছোড়াছুড়িও চলে। অভিযোগ, লাদাখে কয়েকজন ভারতীয় জওয়ানকে চীনারা আটকও করে রাখে। যদিও ভারত তা অস্বীকার করেছে।
করোনাকালে এই উত্তেজনা বাড়তি একটা সংকট সৃষ্টি করেছে। উত্তেজনার খবর পাওয়া মাত্র ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল নারভানে লাদাখের ফরোয়ার্ড সেক্টরে চলে যান। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দফায় দফায় আলোচনায় বসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত ও তিন বাহিনীর পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে। ঠিক হয়, সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটাতে হবে। কিন্তু তা না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সেনা তার বর্তমান অবস্থান থেকে সরবে না। অবিতর্কিত এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজও বন্ধ করা হবে না। আরও ঠিক হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীন তার অংশে বাড়তি সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করলে ভারতও করবে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, চীন তাদের অংশে বেশ কিছু বাংকার ও নতুন ছাউনি তৈরি করেছে। তিব্বতের গারি গুনশা ঘাঁটিতে ব্যাপক নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে কয়েকটি যুদ্ধ বিমানের উপস্থিতিও উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে। ওই অঞ্চলে ওই সময়ে চীনা সামরিক হেলিকপ্টার একাধিকবার ভারতীয় সীমানায় ঢুকেছে বলেও ভারতের দাবি।
এই উত্তেজনার মাঝে চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীন জানায়, ভারতে অবস্থানরত চীনা নাগরিকেরা চাইলে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মঙ্গলবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং জানান, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাকে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বুধবার একই সঙ্গে দুটি বিবৃতি আসে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সুর নরম করে বলেন, চীন-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে। দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। সামরিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলও কার্যকর। কাজেই আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটবে। দিল্লিতে প্রায় একই সুরে কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূতও।
তবে আগ্রহ সঞ্চারিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ঘিরে। এক টুইটে তিনি বলেন, ভারত ও চীন দুই দেশকেই বলেছি, সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে আমেরিকা প্রস্তুত, ইচ্ছুক ও পারদর্শী।
করোনা সংকটের সময় সীমান্তে চীন কেন এভাবে সক্রিয়? সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং মনে করেন, করোনার দরুন প্রায় একঘরে চীন নজর ঘোরাতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীন-বিরোধী জোটে ভারত শামিল হোক বেইজিং তা চায় না। তা ছাড়া এমনও মনে করা হচ্ছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক প্রয়োজনে ভারতের নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ চীনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভারতকে তারা একটা বার্তা দিতে চাইছে।
Discussion about this post