পঙ্গপাল তাড়াতে ভারতের রাজস্থান রাজ্যে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার(২৮মে) টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই প্রথম ভারতের কোনো রাজ্য পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করল।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় কিছু ড্রোন রাজস্থান রাজ্য কৃষি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। পরদিন বুধবার সকাল থেকেই কার্যক্রম শুরু করা হয়। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের চোমু তেহসিল এলাকার সামোদ গ্রামে পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এক দিন আগে পঙ্গপাল হানা দেয় এই গ্রামের কৃষিজমিতে। পরে মধ্যপ্রদেশেও পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশেষভাবে তৈরি এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করে ১০ লিটার করে কীটনাশক ছড়ানো যায়। এটি একধরনের শব্দ করে, যা পঙ্গপাল তাড়াতে সাহায্য করে।
রাজ্য কৃষি বিভাগের কমিশনার ওম প্রকাশ বলেন, পঙ্গপাল ছড়িয়ে থাকা যেসব জায়গায় সাধারণ ট্র্যাক্টর পৌঁছানো সম্ভব ছিল না, সেখানে সফলভাবে ড্রোন দিয়ে পঙ্গপালদের চলাচল সাফ করে দেওয়া হয়েছে। মাঠ কর্মীদের এর প্রভাব সম্পর্কে একটি বিশদ মূল্যায়ন সরবরাহ করা হয়েছে।
কৃষিবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শিগগিরিই এ কাজে ৩০টি ড্রোন যুক্ত করা হবে।
চলতি বছরের শুরুতে পঙ্গপালের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া। কৃষি জমি রক্ষায় কেনিয়াও ড্রোন ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে। তবে কেনিয়া যে ড্রোন ব্যবহার করতে যাচ্ছে, এতে থাকবে ক্যামেরা ও ম্যাপিং সেন্সর। এর মাধ্যমে পঙ্গপালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
করোনা সংকটের মধ্যে ভারতের নতুন উৎপাত এই পঙ্গপাল। মরুভূমি থেকে আসা এই পঙ্গপাল ইতিমধ্যে দেশটির প্রায় ৫০ জেলায় হানা দিয়েছে।উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের কর্মকর্তারা জানান, চলতি সপ্তাহে এই দই রাজ্যের অন্তত ১০টি করে জেলায় পঙ্গপাল হানা দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে, পঙ্গপালের প্রভাব দেখা দিয়েছে ওয়ারধা, আমরাবতী ও নাগপুরে। এই জেলাগুলো মধ্যপ্রদেশের কাছেই।
হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নাগপুরের বিভাগীয় যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ রবীন্দ্র ভোসলে বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমলা বাগান। এ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ লোকসান হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই পঙ্গপাল নাগপুরের গ্রামাঞ্চলের গভীরে ঢুকে পড়ছে। গত মঙ্গলবার কলমেশ্বর উপজেলায় বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়শ, ফুলকপি ও শিমসহ ৫ থেকে ৬ হেক্টর জুড়ে সবজি ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর আমরা পেয়েছি।’
এমনিতেই করোনা মোকাবিলার লকডাউনে দেশটিতে কৃষিখাতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে খাদ্য–সংকটের। পঙ্গপালের সংক্রমণের কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। পঙ্গপাল ইতিমধ্যে ভারতের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ধ্বংস করেছে।
ভারতের আগে এই পঙ্গপালের দলটি পাকিস্তানেও হামলা চালিয়েছিল। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকার শস্য খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৪ কোটি পঙ্গপালের ঝাঁক এত শস্য সাবাড় করতে পারে, যা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার জোগানো সম্ভব।
Discussion about this post