বিশেষ প্রতিবেদক
করোনা সংকটের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড় কোটি উপবৃত্তি সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদেরকে সুখবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়। উপবৃত্তি পাওয়ার যেসব শর্ত ছিল তা শীতিল করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সবাইকে উপবৃত্তি আওতায় রাখা হবে। অর্থাৎ এ সময়কালে উপবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো শর্তারোপ করা যাবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একইসঙ্গে প্রতি শিক্ষার্থীকে জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য এক হাজার করে ‘অ্যালাউন্স’ দেয়ার টাকাও ছাড় করেছে সরকার। এ টাকাও উপবৃত্তির সঙ্গে একসঙ্গে দেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় উপবৃত্তি পাওয়ার যেসব শর্ত রয়েছে তা কোনো শিক্ষার্থীই পূরণ করতে পারবে না। সেজন্য জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের উপবৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত আরোপ করা হবে না। সবাই উপবৃত্তির আওতায় আসবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে উপবৃত্তি সুবিধাভোগী ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি পেয়ে থাকেন। তাদের উপবৃত্তি পেতে হলে শিক্ষার্থীর ৮৫% উপস্থিত থাকা, পরীক্ষার ৩৩ নম্বর পাওয়াসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। বন্ধের সময়কালে এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই উপবৃত্তি পাবেন কি-না এমন দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
এদিকে গত ডিসেম্বর শেষ হওয়া প্রকল্পটি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সায় পাওয়ার পরই গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের বকেয়া উপবৃত্তির ২৯১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন জানুয়ারি থেকে জুনের (দুই কিস্তি) উপবৃত্তি একসঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রকল্পের নতুন সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রী প্রতি শিক্ষার্থীকে জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য এক হাজার করে ‘অ্যালাউন্স’ দেয়ার টাকাও ছাড় করেছে সরকার। এ টাকাও উপবৃত্তির সঙ্গে একসঙ্গে দেয়া হবে। সেজন্য এপ্রিল মাসে উপজেলার উপবৃত্তির চাহিদা চেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি দেয় প্রকল্প থেকে। গত ১৪ মের মধ্যে তথ্য দেয়ার সময়সীমার মধ্যেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা চাহিদা পাঠিয়েছে। সে চাহিদার প্রেক্ষিতে টাকা ছাড়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে উপবৃত্তি প্রকল্প।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ১০০০ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা করোনার পরবর্তী গরিব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ১৯৯৯ সালে উপবৃত্তি প্রকল্প শুরু হয়। বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদ চলছে। প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংযুক্তি প্রাথমিক স্তর, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক স্কুল, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত চালু করা সরকারি প্রাথমিক স্কুল, সরকার স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং হাই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন।
Discussion about this post