নিউজ ডেস্ক
২৩ মে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হন সাইফুর রহমান। মঙ্গলবার (২ জুন) তিনি হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেন। এই ১১ দিনে তার বিল ধরা হয় এক লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকা। বিল দিতে না পারায় হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জের কাগজ নিয়েও বের হতে পারছিলেন না তিনি। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে আটকে রাখা হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত অনেক অনুরোধ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান সাইফুর।
সাইফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কোনও অপারেশন করা হয়নি। আইসিইউতে ছিলাম না। অক্সিজেন দেওয়াও লাগেনি। কেবল নাপা আর গ্যাসের ট্যাবলেট দিয়েছে তারা। বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে খেয়েছি।’
রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে যে ১৩টি হাসপাতাল রয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের তালিকায় রয়েছে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল। ১৬ মে হাসপাতালটির ২০০ বেডের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ভবনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সেদিন তিনি বলেন, ‘রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ ২০০ বেডের এই হাসপাতালটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই হাসপাতালে ২০০টি নতুন বেড, ১০টি আইসিইউ, ১০টি এইচডিও ও পাঁচটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য এখানে পিসিআর মেশিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘মাত্র ১৯ দিনে হাসপাতালটি প্রস্তুত করে দিয়ে কর্তৃপক্ষ সরকারের কাজ সহজ করে দিয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, সেটি আমরা পালন করেছি, আমরা মানবতার কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমি অন্য কিছু কখনও চাইনি। আমরা এখানে কোনও চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করবো না, বা রোগীর সঙ্গে ব্যবসা করবো না। সেবা দেওয়াই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’
এদিকে ভুক্তভোগী সাইফুর রহমান বলেন, ‘গত ২১ মে আমার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। দুই দিন পর ২৩ মে আমি এই হাসপাতালে ভর্তি হই। আমি জানতাম এই হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা করা হয়। রোগীদের বিল সরকার দেয়। এরা কেবল দু’টি এক্সরে আর দু’টি রক্তের টেস্ট করিয়েছে। ব্লাড টেস্ট দুইটিতে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পড়ার কথা। সব মিলিয়ে দুই হাজার টাকার টেস্ট করানো হয়। আর দুইটি এক্সরে করেছে তারা।’
সাইফুর রহমানের বিলের কাগজে দেখা গেছে, ২ জুন পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসকের বিল ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭০০ টাকা, হাসপাতাল বিল এক লাখ ১৪ হাজার ৫৭০ টাকা, ইনভেস্টিগেশন বিল ১৯ হাজার ৪৭৫ টাকা, ওষুধের বিল পাঁচ হাজার ২২৬ টাকা ৮৫ পয়সা, এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ১২ হাজার ৯০৩ টাকা। মোট এক লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ টাকা ৮৫ পয়সা। মোট বিল লেখা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকা।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক ( প্রশাসন) ডা. ইহতেশামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে যে চুক্তি আমাদের হয়েছিল সেটা গত ৩১ মে থেকে বাতিল করেছি। যে কারণে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় তাদের বহন করতে হবে। এইভাবেই চলছে এখন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কোভিড প্রজেক্টে আমরা এখন নেই। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে হাসপাতাল। যে কারণে বিলটা করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।’
কিন্তু কেবল নাপা, রক্তের দুইটি পরীক্ষা আর দুইটি এক্সরের বিল কী করে দেড় লাখ টাকা হয়—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রোগীকে তার সব বিলের কাগজসহ আপনার রেফারেন্সে বুধবার আসতে বলেন। আমি দেখবো বিষয়টি।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই এই হাসপাতালের। কারণ এ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা ফ্রি হওয়ার কথা। বুধবার বিষয়টি আমি দেখবো।’
আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ সরকারি চুক্তি বাতিল করেছে বলে রোগীকেই হাসপাতালের সব খরচ বহন করতে হবে বলে হাসপাতালটি থেকে জানানো হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৩১ মে পর্যন্ত সরকারি নিয়মে চলতে হবে তাদের। মূল কথা হচ্ছে, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগী থেকে টাকা নেওয়া যাবে না। তবে ১ জুন থেকে তারা বিল নিতে পারবে।’
Discussion about this post