আন্তর্জাতিক ডেস্ক
একটানা ১০ দিন ধরে অব্যাহত বিক্ষোভে একপ্রকার কোণঠাসাই হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের আভাস দিতে রাজধানীতে সামরিক বাহিনী নামিয়েছেন তিনি। গভর্নরদের নির্দেশ দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে হটাতে। নিজের সমর্থন বাড়াতে আগুনে পুড়ে যাওয়া গির্জার সামনে বাইবেল হাতে ছবিও তুলেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সহিংসতা কমলেও বিক্ষোভ কমছে না। উল্টো সমালোচিত হচ্ছেন ট্রাম্প। নিজ দল আর পুরোনো সমর্থকদের মধ্যেই দেখা দিচ্ছে অসন্তোষ।
ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের করা সমালোচনা। সবচেয়ে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল জেমস ম্যাটিস। তিনি কোনো রাখঢাক ছাড়াই ট্রাম্পকে অযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে বিভক্ত করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা থেকে গত বছর পদত্যাগ করেন জেমস ম্যাটিস, যিনি জিম ম্যাটিস নামেই বেশি পরিচিত। ওই বিচ্ছেদের আগে ট্রাম্প তাঁকে ‘মাই জেনারেল’ নামে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি ভালোবাসতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের সাবেক চেয়ারম্যান জেনারেল মাইকেল মালেনও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ‘আর নীরব থাকা সম্ভব নয়’ শিরোনামে এক নিবন্ধে তিনি চলতি বিক্ষোভকে এক বাঁক ফেরানো ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। গির্জার সামনে বাইবেল হাতে ছবি তোলার জন্য বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যেভাবে রাবার বুলেট
আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, তার জন্য শুধু ট্রাম্প নয়, তাঁর অধীন সেনা নেতৃত্বকেও দোষারোপ করেছেন তিনি।
আর যে ইভানজেলিক্যালদের হাতে রাখতে ট্রাম্প গির্জার সামনে ছবি তোলার অভিনয় করেন, তাঁরাও প্রেসিডেন্টের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। গত পৌনে চার বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে সবচেয়ে সুবিধা পেয়েছে এই ইভানজেলিক্যালরা। অথচ সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, এই ইভানজেলিক্যালদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ১৫ শতাংশ কমেছে। করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় তাঁর ব্যর্থতা এই ধসের প্রধান কারণ। ক্যাথলিকদের মধ্যে সমর্থন কমার হার আরও বেশি, ২৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা সহিংসতা কমলেও বিক্ষোভ থেমে নেই। কঠোর হতে গিয়ে উল্টো সমালোচিত হচ্ছেন ট্রাম্প।
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের ঘটনার সমালোচনা করে ইভানজেলিক্যাল নেতা প্যাট রবার্টসন বলেছেন, ‘আমরা সবাই একই গোত্রভুক্ত। আমাদের উচিত একে অপরকে ভালোবাসা। আপনি যা করেছেন, মি. প্রেসিডেন্ট, তা মোটেই ঠিক নয়।’
তবে ট্রাম্পের জন্য স্বস্তির ব্যাপার রিপাবলিকান নেতৃত্বের মধ্যে তাঁর প্রতি সমর্থন এখন পর্যন্ত কমবেশি অটুট। শ্বেতাঙ্গ রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রায় নিরঙ্কুশ। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেলসহ প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই নিঃশব্দে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আরকানসাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টম কটন এক ধাপ এগিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এ নিবন্ধ লিখে ট্রাম্পকে বাহবা দিয়েছেন। সে নিবন্ধের শিরোনাম, ‘সেনাবাহিনী পাঠানো হোক’।
রিপাবলিকান নেতৃত্বের এই ‘নীরবতার দেয়ালে’ অবশ্য দু-চারটা ছিদ্রও দেখা দিতে শুরু করেছে। একাধিক রিপাবলিকান নেতা সরাসরি সমালোচনার বদলে জেনারেল ম্যাটিসের বক্তব্যকে ব্যবহার করে নিজেদের ভিন্নমত প্রকাশ করছেন। সিনেটর লিসা মুরকাউস্কি বলেছেন, ম্যাটিস ঠিক কথাই বলেছেন, এমন কথা আগেই বলা উচিত ছিল।
ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সিনেটর মিট রমনি বলেছেন, জেনারেল ম্যাটিস একজন অত্যন্ত সম্মানিত মানুষ। অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। সিনেটর সুসান কলিন্স আরও চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বলেছেন, তিনি এখনো ম্যাটিসের বক্তব্য পড়েননি। তবে এই জেনারেলের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।
এসব সমালোচনার জবাবে ট্রাম্প তাঁর পরিচিত অস্ত্রই ব্যবহার করেছেন। ম্যাটিসের ব্যাপারে এক টুইটে বলেছেন, এই লোকটা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ওভাররেটেড’ জেনারেল। মুখে তিনি যত পারদর্শী, যুদ্ধের ময়দানে ততটা নন। লিসা মুরকাউস্কির ব্যাপারে বলেছেন, ২০২২ সালে তাঁকে পুনর্নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবে, তখন তাঁকে পরাস্ত করতে যা করার সবই তিনি করবেন। নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘ভালো-মন্দ যেমন খুশি প্রার্থী খুঁজে বের করুন। আমি তাঁকেই সমর্থন দেব।’
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। গত সোমবার বাইবেল হাতে গির্জার সামনে ছবি তুলতে যাওয়ার সময় রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগের ঘটনায় ওই মামলা করা হয়েছে।
Discussion about this post