অপনাসন কী?
অপনাসন হল যোগাসনের একটি আসন। অপনাসন একটি সংস্কৃত শব্দ। এই যোগাসনটি আমাদের দেহে এক ধরনের নিম্নমুখী শক্তির প্রবাহ তৈরি করে যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এই যোগাসনটি মেয়েদের মাসিক সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে। এটি পাকস্থলী এবং শরীরের পেছনের অংশ থেকে ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করে।
অপনাসনা এর আসন করার নিয়ম স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা নিচে করা হলো-
১) প্রথমে কোন সমতল জায়গায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
মাথা এবং নিতম্ব সোজা মাটির সাথে মিশে থাকবে। ঠিক নীচের ছবিটির মত-
২) তারপর দুই হাত দিয়ে হাঁটু দুটো মুড়ে বুকের কাছে নিন
৩) এভাবে ১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
৪) এবার হাঁটু দুটো ধীরে ধীরে ডান থেকে বামে আবার বাম থেকে ডানে নাড়াতে হবে। মাংস পেশিতে চাপটা অনুভব করার চেষ্টা করুন। তারপর আবার শুরুর মত সোজা হয়ে শুবেন।
৫) এভাবে ১০-১৫ কিংবা আপনার শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী করবেন। এক্ষেত্রে মনে রাখার মত বিষয় হলঃ
• এই ব্যায়ামটি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে মেরুদণ্ড এবং পুরো শরীর সোজা আছে কিনা।
• শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে কিনা।
ভুজুঙ্গাসন কী?
ভুজুঙ্গাসন হলো যোগব্যায়ামের আরেকটি আসন যেটি অন্যান্য আরও বহু উপকারের সাথে সাথে হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করে। ভুজুঙ্গাসন করার নিয়ম স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা করা হলো-
১) প্রথমে কোন সমতল জায়গায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরতে হবে। পেট এবং কপাল মাটির সাথে মিশে থাকবে।
২) তারপর দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে শরীরকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তুলতে হবে এবং পেছনের দিকে বাঁকা করতে হবে নীচের ছবির মতন-
৩) এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পরতে হবে।
৪) এই নিয়মে প্রতিদিন ১৫-২০ বার বা আপনার দেহের সামর্থ্য অনুযায়ী করতে হবে।
এক্ষেত্রে মনে রাখার মত বিষয় হলো-
• এই ব্যায়ামটি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে হাত দুটো সোজা আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
• ঘাড় সহ পেছনের দিকে স্ট্রেচ করতে হবে।
• কোমরটাকেও মাটি থেকে কিছুটা ওপরে তুলতে হবে।
• শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
ভুজুঙ্গাসনের উপকারিতা
ভুজুঙ্গাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো-
১) খাবার হজমের সমস্যা দূর হয়
২) কোমর ও পিঠের বাত-ব্যথা নিরাময় হয়
৩) পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং পরিপাক যন্ত্রের সমস্যা দূর করে
৪) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর হয়
৫) কাঁধের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
৬) মেরুদণ্ডের হাড়কে মজবুত করে
৭) শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়
ধনুরাসন কী
পরিপাকযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী আরেকটি আসন হল ধনুরাসন। এই আসনকে বো পোজও বলা হয়।
ধনুরাসন করার নিয়ম স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা দেয়া হলো-
১) প্রথমে কোন সমতল জায়গায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরতে হবে। পেট এবং কপাল মাটির সাথে মিশে থাকবে।
২) তারপর পা এবং ঘাড় একইসাথে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তুলতে হবে
৩) দুই হাত দিয়ে দুই পা ধরে শরীরে চাপ অনুভব করতে হবে নীচের ছবির মতন-
৪) এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পরতে হবে।
৫) এই নিয়মে প্রতিদিন ১৫-২০ বার বা আপনার দেহের সামর্থ্য অনুযায়ী করতে হবে।
এক্ষেত্রে মনে রাখার মত বিষয় হলঃ
• এই ব্যায়ামটি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে হাত দুটো যাতে সোজা টানটান থাকে।
• ঘাড় সমান্তরাল থাকবে এবং দৃষ্টি সামনের দিকে।
• শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
ধনুরাসনের উপকারিতা
ধনুরাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা নীচে উল্লেখ করা হলো-
১) এর সাহায্যে পরিপাকযন্ত্রে ম্যাসাজ হয় যার ফলে পরিপাকযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
২) পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে
৫) হাঁটুর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
৬) ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে।
এই যোগাসনগুলো যতটা সহজ ততোটাই কার্যকরী। আপনি যদি প্রতিদিন কাজের ফাঁকে নিয়ম করে অন্তত ১০ মিনিটও এই তিনটি আসন করেন তাহলে আপনার পরিপাকযন্ত্রের যাবতীয় সমস্যা দূর হওয়ার সাথে সাথে দৈহিক অন্যান্য অনেক সমস্যায় উপকার পাবেন।
Discussion about this post