আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আহমাদ আরবেরি ২৫ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। আমেরিকান হাইস্কুল ফুটবলের একজন তুখোড় খেলোয়াড়। আটলান্টার ছোট্ট শহর ব্রান্সউইকে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জগিং করতে বের হয়ে শ্বেতাঙ্গদের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনার বিচার চলছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জর্জিয়ার একটি আবাসিক এলাকা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিলেন আহমাদ। গ্রেগরি মিক মাইকেল নামের স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ি থেকে আহমাদকে লক্ষ্য করেন। আহমাদকে দেখে সম্প্রতি তাঁর এলাকায় ঘটে যাওয়া কয়েকটি ডাকাতির আসামি মনে হয়েছিল। কারণ, তার কিছুদিন আগে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা অপরাধীর মতো লেগেছিল আহমাদকে। এ কারণে তিনি ছেলে ট্রাভিস মিক মাইকেলকে ডাক দেন। তাঁরা একটি .৩৫৭ ম্যাগনাম বন্দুক ও একটি শটগান নিয়ে পিকআপে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে আরও একজন যোগ দেন। ধাওয়া করে আহমাদকে আটক করেন তাঁরা। সেখানে আহমাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে শ্বেতাঙ্গদের একজন গুলি করে আহমাদকে হত্যা করেন। ঘটনাটি নিয়ে শুরুতে তেমন কোনো প্রচার ছিল না, এমনকি শুরুতে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পুরো ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, আহমাদ ও একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির মধ্যে ধস্তাধস্তি চলছে। একপর্যায়ে গুলি চলে। এরপরই বিষয়টির প্রতি গণপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। নাগরিক অধিকার কর্মীরা এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এরপর জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পদক্ষেপ নেয়। গ্রেগরি মিক মাইকেল ও তাঁর ছেলে ট্রাভিস মিক মাইকেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তৃতীয় ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। গত ২৮ মে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা ও আহমাদ আবরেরির প্রতি সহিংস আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানায়, গ্রেগরির ছেলে ট্রাভিস মিক মাইকেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনিই আহমাদকে গুলি করেছেন।
জর্জিয়ার আটলান্টিক জুডিশিয়াল কোর্টের প্রসিকিউটর টম ডারডেন বলেন, আহমাদের মৃত্যুতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন গ্র্যান্ড জুরি। অবশ্য অন্য এক প্রসিকিউটর বলেন, এই শ্বেতাঙ্গ বাবা-ছেলে জর্জিয়া রাজ্যের আইন অনুসারে আত্মরক্ষামূলকভাবে আহমাদকে ধাওয়া করছিলেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আহমাদকে ধাওয়া ও গুলি করে হত্যার পর অভিযুক্তদের বর্ণবাদী গালি দিতে শোনা গেছে। অভিযুক্ত একজনের দেওয়া জবানবন্দি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রান্সউইকের আদালতে এই মামলার শুনানি চলাকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ থেকেই তদন্তকারীরা এই হত্যাকাণ্ডে বর্ণবাদের গন্ধ পান। গ্লিন কাউন্টি হাকিম আদালতে গ্রেপ্তার হওয়া এ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ পান জজ ওয়ালেস ই. হ্যারল্ড।
একদিকে আহমাদের মামলার শুনানি চলছে আর অন্যদিকে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে গত ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় ১২ হাজার লোক এ আন্দোলনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ২৯ মে অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের আদেশে মিনিয়াপোলিসের সাবেক পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ফেডারেল নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু হয়।
জর্জিয়ায় আহমাদ আরবেরির আইনজীবী জানান, এ মামলাতেও একই অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু হয়েছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে হেইট ক্রাইম আইন নেই। কিন্তু হত্যার পর অভিযুক্তদের বর্ণবাদী মন্তব্য করার তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়ায় আহমাদের মায়ের আইনজীবী বলেন, এই মামলাতেও ফেডারেল হেইট ক্রাইমের অধীনে চার্জ গঠন করার সুযোগ রয়েছে।
Discussion about this post