নিজস্ব প্রতিবেদক
মরণঘাতি ভাইরাস করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে দশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য আবুল খায়ের গ্রুপের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত ২ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং আবুল খায়ের গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদ উল্লাহ চৌধুরী এই সমঝোতা স্বারকে স্বাক্ষর করেন।
সূত্র মতে দেশে বাণিজ্যিকভাবে অক্সিজেন উৎপাদন করা সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠানটিতে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ টন। আর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত আবুল খায়েল গ্রুপের একেএস প্লান্টে রয়েছে ২৬০ টন অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা, যা বাংলাদেশে বৃহত্তম। প্রতিষ্ঠানটি এই অক্সিজেন ব্যবহার করে শুধুমাত্র নিজেদের একেএস ব্র্যান্ডের স্টিল উৎপাদনে। এই প্ল্যান্টের অক্সিজেন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে না একেএস। কিন্তু করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষার কথা চিন্তা করে দেশের এই শিল্পগ্রুপটি তাদের প্ল্যান্টের অক্সিজেন উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় অনেক রোগীর জীবন রক্ষায় প্রয়োজন হয় অক্সিজেন। সেই চিন্তা থেকে করোনা চিকিৎসায় নিজস্ব অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দিল আবুল খায়ের গ্রুপ। এরই প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন করোনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আবুল খায়ের গ্রুপ থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে দেশের এ ক্রান্তিকালে আবুল খায়ের গ্রুপ নিজেরাই সকল করোনা হাসপাতালে সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে বিশেষায়িত ২শ আধুনিক অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করেছে।
এসব অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে আগামী ১০ মে থেকে এই শিল্প গ্রুপের নিজ খরচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ শুরু করবেন বলে জানান আবুল খায়ের গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (এ্যডমিনিস্ট্রেশন) ইমরুল কাদের ভূইয়া। তিনি বলেন, এজন্য আমাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের লক্ষ্যে আলাদাভাবে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় করে ইতোমধ্যে প্ল্যান্টে স্থাপন করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে করোনা হাসপাতালগুলোতে যতো অক্সিজেন প্রয়োজন হবে, তার সবটাই আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান একেএস প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। একটি সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হলে পুনরায় রিফিল করে দেয়া হবে। এজন্য একটি বিশেষ টীম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দেশের করোনা চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব হাসপাতালের নিজস্ব বিশেষায়িত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে, তারাও নিজেরা এসে ফ্রি অক্সিজেন রিফিল বা ভর্তি করে নিতে পারবে। এজন্য বিভিন্ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি হটলাইন নাম্বার চালু করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। নাম্বারটি ০১৯৮৮ ৮০২১৬৬।
আবুল খায়ের গ্রুপের ওই শীর্ষকর্মকর্তা বলেন, দেশের এ সংকটকালে মানুষ বাঁচানোর জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান কিছু করতে পারায় তারা নিজেরাও আনন্দিত।
দেশের এই সংকটকালে মানুষকে বাঁচানোর জন্য আবুল খায়ের গ্রুপের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সরকারী কর্মকর্তারাও। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, দেশে করোনা সংকট কালে মানুষ বাঁচানোর জন্য হাইফ্লো অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়ে আবুল খায়ের গ্রুপ অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছে। সরকারি অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ থাকলেও বর্তমান করোনার জন্য নির্ধারিত অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের সরবরাহ নেই। এ পরিস্থিতিতে আবুল খায়ের গ্রুপের সরবরাহ করা অক্সিজেন করোনা রোগিদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষায় বড় ভুমিকা রাখবে, বলেন, করোনা নিয়ে সম্মুখ থেকে লড়াইয়ে থাকা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ জানান, জাতির এই সংকটময় সময়ে নানাজন নানা ভাবে এগিয়ে আসছে। করোনা রোগিদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে আবুল খায়ের গ্রুপ মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলো। তিনি প্ল্যান্ট থেকে সারাদেশের করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এরিমধ্যে আবুল খায়ের গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনুদান প্রদান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার সহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ, পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়।
Discussion about this post