মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
আল্লাহ পাক সুন্দরকে পছন্দ করেন। সুন্দরভাবে কথা বলা এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণকারীকে তিনি ভালোবাসেন। সামান্য কারণে আমরা একে অপরের সাথে মন্দভাষায় কথা বলি, যা মোটেও ঠিক নয়। এছাড়া কারণে অকারণে অনেক যারা খুব বেশি কথা বলেন, তাদেরকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না। প্রবাদ আছে-
‘কম চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই অধিক কথা বলেন।’
ব্যক্তিত্বহীন মানুষের অভ্যাস হল অকারণে বকে যাওয়া। বেশি বলাতে যেমন বোকামি প্রকাশ পায়, তেমনি শ্রোতাদেরও বিরক্তির কারণ হয়।
তাই অযথা বেশি কথা না বলে কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। বাজে কথা এবং বেশি কথা চিন্তাকে ঘোলাটে এবং ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। এডিসন বলেছেন-
‘একজন মানুষ তখনই চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে যখন সে অনর্থক কথা বলা এবং অপকর্ম থেকে বিরত থাকে।’
আসলে কেউ যখন অহেতুক কথা বলতে থাকে তখন এর মাঝে নানান মিথ্যা এবং মন্দ কথাও মুখ থেকে বের হয়ে যায়। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা অপছন্দ করতেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জানা যায় যে, না তিনি কখনও অহেতুক কসম খেয়ে কিছু বলতেন আর না কখনও কোনো খারাপ কথা বলতেন।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি স্বীয় জ্বিহবা ও গোপন অঙ্গকে গোনাহ হতে বাঁচিয়ে রাখে আমি স্বয়ং তার বেহেশতের জামিনদার।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘রাত ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বা শ্রদ্ধার সঙ্গে বলে ওঠে, সব সময় আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে আমরাও তোমার অনুবর্তীতা করব।’
কাজেই কম কথা এমনভাবে বলা উচিত, যাতে আন্তরিকতার পরশ থাকে। ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বান্দা যখন ভাল মন্দ বিচার না করেই কোনো কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এতদূর গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের সমান।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিশেষ করে রাগ উঠলে অনেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারে না আর রাগের মাথায় যা ইচ্ছে তাই বলে ফেলে। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই অধিকাংশ ঝগড়ার সূচনা জিহ্বার কারণেই হয়ে থাকে অর্থাৎ কথার সূত্রপাতকে ধরেই ঝগড়ার সূচনা হয়।
তাই মানুষ যখন রেগে যায় তখন যদি একপক্ষ চুপ থাকে তাহলে দ্রুত ঝগড়া শেষ হয়ে যায়।
রাগ থেকে বাঁচতে করণীয়-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কারো রাগ উঠে তখন সে যেন পানি পান করে। এরপর বসে যায়। আর এরপরেও যদি রাগ না কমে তাহলে সে যেন বিছানায় শুয়ে পড়ে।’ আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তুমি বল, আমার বান্দারা সর্বদা যেন উত্তম কথা বলে। অন্যথায় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ ও ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে পারে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ৫৩)
এই পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে দু’টো জিনিস দেখা যায়, প্রথমত পশুত্ব আর দ্বিতীয়ত মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্ব পরম ধন। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়েই তা লাভ করতে হয়। প্রবাদ আছে-
‘প্রথম যে দিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে শুধু তুমি, হেসে ছিল সবে। এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভূবন।’
যুগ যুগ ধরে মানুষ অমর হয়ে থাকে কেবলমাত্র তার উত্তম কর্মের মধ্য দিয়ে। গর্ব, অহংকার আর বিলাসী জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজের কর্মে পুণ্য অবলম্বণ করো এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের পথ অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যেন কেউ মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে যদি সৎ হয় তাহলে জীবিত থেকে আরও বেশি সৎ কাজ করতে পারবে। আর যদি সে অসৎ হয়- তাহলে তার পাপসমূহের জন্য তাওবা করার সুযোগ পাবে।’ (বুখারি)
পরিশেষে-
সুন্দরের মাঝেই মনুষ্যত্বের পরিচয়। মানুষের কথা-বার্তা, মনোভাব, আদব-কায়দার মধ্য দিয়েই সুন্দরের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে। তাই আমাদের সব সময় অযথা কথা না বলে অল্পকথা ও ভালকথা বলা উচিত।
এছাড়া আমরা যেন এমন কোনো কর্ম না করি যার জন্য আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সামান্য বিষয়ে রেগে না গিয়ে বরং ধৈর্য্য ধারণ করাই একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post