নিউজ ডেস্ক
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমন থেকে মানুষকে বাঁচানো,আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা,মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আর্থিক ও খাদ্য সংকট রক্ষা এবং চট্টগ্রামে পরিক্ষা বুথ ও আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধিসহ চট্টগ্রামে সরকারী বেসরকারী সকল হাসপাতালে করোনা রোগীদের হয়রানী কমানোর লক্ষ্যে ১৩ দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।
শনিবার (১৩ই জুন) বেলা ৩টায় সংগঠনটির মহাসচিবের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, কোনো অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রিতা জাতির জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম কর্তাদের অবহেলা ও করোনা নিয়ে ব্যবসার কারণে দেশের বিশেষ করে চট্টগ্রামের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির আশংকাজনক অবনতি এবং চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যাবস্থার করুণ দশা দেশবাসীকে হতাশ করে দিচ্ছে। এই করোনার সংকট কালেও কিছু অসাধু ব্যক্তি মানবতাহীন কাজ করেছে এবং চালাচ্ছে করোনা ভাইরাসের আদলে ব্যবসা। যে ব্যবসার কারণে সাধারণ রোগীরা যেমন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি বিনা চিকিৎসায় এক হাসাপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দরজায় দরজায় ধাক্কা খেয়ে এম্বুলেন্সেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেক রোগীর।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের উপস্থাপিত ১৩ দফা:
১. করোনার উপসর্গ থাকলে প্রত্যেক নাগরিককে কালবিলম্ব না করে টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। সব উপজিলা ও নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টেষ্টের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. সাথে সাথে রিপোর্টের নিয়ম চালু না হওয়া পর্যন্ত টেস্টের রিপোর্ট ২৪ ঘন্টার মধ্যে অথবা পরের দিনের মধ্যে দিতে হবে। টেস্ট ও রিপোর্ট নিয়ে অনিয়ম ও অবৈধ ব্যবসা কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
৩. মানুষ যাতে নিচ্শিতভাবে কাজ কর্মে ফিরে যেতে পারে তার জন্য এন্টিবডি টেস্ট এর ব্যাপক ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও আইন- শৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৪. ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামের চরম দুর্দশাগ্রস্থ সরকারি- বেসরকারি চিকিৎসা ব্যাবস্থার কারণে এবং জরুরিভিত্তিতে মানুষের জীবন বাঁচাতে করোনা রোগীদের জন্য উন্নত, দ্রুত ও সুশৃঙ্খল চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফিল্ড হসপিটাল অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে স্থাপন করতে হবে।বিশ্বের অনেকদেশে সেনাবাহিনী ফিল্ড হাসপাতাল করেছে, এখানে করাটা যুক্তিযুক্ত। মনে রাখতে হবে, আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতাল বা ফিল্ড হাসপাতাল এক জিনিস নয়। ইতালি. আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা যাবে না।
৫. জেলা ও উপজেলার প্রত্যেকটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা করে নিতে হবে। উপজিলা পর্যায়ে আইসোলেশন সেন্টার থাকতে হবে।
৬. সকল প্রাইভেট ক্লিনিকে করোনা চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। করোনা আক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য রুগীদের নিয়মিত ও জরুরি চিকিৎসা যেন কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত না হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বার্থ হলে তার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. ডাক্তার নার্সদের জন্য জরুরী ট্রেনিংয়ের ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পোশাক নিশ্চিত করতে হরে। প্রয়োজনে চিকিৎসকদের সাহায্য করার জন্য অস্থায়ী বা স্থায়ী সহকারী ও ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে ট্রেনিং দিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. যে সব আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সাহায্য আসছে এ সবকিছুর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে, চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেশন এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়া সরাসরি ভেন্টিলেশনে না দিয়ে বিকল্প হিসেবে নিঃশ্বাসের সমস্যা নিয়ে আগত করোনা রুগীদের জন্য উচ্চ অক্সিজেন চাপ সম্পন্ন সিপ্যাপ মেশিন এর ব্যবহার করা উচিত। এটি ভেন্টিলেশনে এর তুলনায অনেক অনেক সস্তা তবে হাসপাতলে সেট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যা চট্টগ্রামের কয়েকটি হাসপতালে আছে তবে সিপ্যাপ মেশিন তেমন একটা নেই। কাজেই এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে কাল বিলম্ব না করে পর্যাপ্ত সংখ্যক হাই ফ্লো সিপ্যাপ মেশিন আমদানি করে হাসপাতালগুলিতে দেযা হয এবং মানুষের জীবন বাঁচানো হয়ে। এ ছাড়া এটি দেশেও বানানো সম্ভব এবং এ জন্য আহবান জানাচ্ছি সরকারকে বিষযটিকে জরুরিভাবে দেখার জন্য।
৯.যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের প্রতি সম্মান জনক আচরন ও চিকিৎসার সুযোগ করে নিতে হবে। প্রবাসীদের প্রতি কোনো হয়রানি যেন না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত ব্যক্তির যথাযথ জানাজা-দাফন/ সৎকারের নিশচয়তা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকারে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০.আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার গাইডেন্স অনুযায়ী বর্তমানে ইবোলাসহ অন্যান্য রোগের যেসব ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বৃহৎ সফলতা অর্জিত হয়েছে এবং ট্রায়াল হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি আছে, সেগুলি এবং রক্তের প্লাসমা ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি (যা এখনো ট্রায়াল এর পর্যায়ে আছে) সতর্কতার সাথে রোগী বিশেষের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সুব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ঔষুধগুলি বা প্লাজমা দান নিয়ে নিয়ে কেউ যেন অসাধু ব্যবসা না করেন এবং সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করতে না পারে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে এসবের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
১১ .পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত লক ডাউন যথাযথভাবে চালু রাখতে হবে, তবে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন, জরুরি সার্ভিস, ওষুধ এবং খাদ্য সামগ্রীর জন্য যাতায়াতের সুযোগ শর্তাধীন রাখতে হবে।
১২ . পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা টাস্কফোর্স গঠন করা চট্টগ্রামের করতে হবে। চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী, এম পি, মেয়র, সিভিল সার্জন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধানগণ, ক্যান্টমেন্টের জিওসি ইত্যাদি ব্যাক্তিবর্গের নিয়মিত অন্তত ভার্চুয়াল সভা করে টাস্ক ফোর্সের কাজের তদারকি ও পরামর্শ প্রদান করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্রিয় অবদান রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন মানুষ খাদ্য সংকটে না থাকে তার নিচ্শয়তা দিতে হবে জন প্রতিনিধিদের। প্রয়োজনে যার যার এলাকার বিত্তবানদের থেকে তহবিল সংগ্রহ করে তারা জরুরিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য উদ্যোগ তারা নিতে পারেন।
১৩. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে আইসিইউসহ ২৫০ শয্যাকরে করোনা ইউনিট করা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডিতে যথাক্রমে আরো ১০০ ও ৫০ টি করোনা শয্যার ব্যবস্থা করা এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও ডায়েবেটিস হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরকারি সাহায্য দিয়ে বৃহৎ আকারে করোনার চিকিৎসার সুযোগের সৃষ্টি করতে হবে।
Discussion about this post