নিউজ ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের মেডিকেল বিষয়ক উচ্চতর ডিগ্রি এফসিপিএস পরীক্ষা জুলাই ২০২০ সেশনের স্থগিত করা হয়েছে। আজ রোববার (১৪ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) কাউন্সিলরদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
রোববার বিসিপিএসের অনারারি সচিব অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম মেডিভয়েস।
খবরে বলা হয়, বিসিপিএস কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষা এখন হবে না। ফলে জুলাই সেশনের সকল পরীক্ষা (এফসিপিএস ১ম পর্ব, এফসিপিএস ২য় পর্ব (শেষ পর্ব), প্রিলিমিনারি এফসিপিএস ২য় পর্ব, এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) এবং এমসিপিএস) স্থগিত করা হয়। এতে ৪৮ বছরের ইতিহাসে এফসিপিএস পরীক্ষা প্রথমবারের মতো স্থগিতের ঘটনা ঘটল।
পরীক্ষা সংক্রান্ত যেসব নিয়ম আগে ছিল, এগুলো বহাল থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা একই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়াও এই সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইলে কলেজের নিয়মানুযায়ী তা করতে পারবেন। এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে থিসিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তার বৈধতা থাকবে।
এ সেশনের পরীক্ষা কবে নেওয়ার চিন্তা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির আগে পরীক্ষা হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলেও মিড টার্ম কোনো পরীক্ষা হবে না। এখন আমরা যদি বলি, জানুয়ারিতে পরীক্ষা নেবো; দেখা গেলো, ওই সময়ে পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হয়ে গেলো। তখন যদি পরীক্ষা নেওয়া না যায়, তাহলে তো আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আইনগতভাবে আমরা পরীক্ষার বাতিল করতে পারবো না। কারণ আমরা পরীক্ষা ফি নিয়েছি। তাই বাতিল করিনি, স্থগিত করেছি।’
ছেদ পড়লো এ ব্যাপারে আপনার অনভূতি কি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। প্রেসিডেন্ট স্যার আজকে একটা ভালো উদাহরণ দিয়েছেন। তাহলো, ফুটবল খেলায় কোনো এক দল ১০টি গোল দিয়েছে, আরেকপক্ষ তিনটি দিয়েছে। এদিকে খেলার আর মাত্র ১০ মিনিট সময় বাকি আছে। পিছিয়ে থাকা দল যদিও জানে তারা সমতায় ফিরতে পারবে না, তাই বলে খেলা বন্ধ করে দেয় না। একইভাবে আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি।’
এর আগে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত বিসিপিএসের ইসি কমিটির বৈঠকে পরীক্ষা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করা হয়। ইসি কমিটির ৭ সদস্যের ঘণ্টাব্যাপী এ পর্যালোচনা শেষে হয় কাউন্সিলরদের বৈঠক। ওই বৈঠকে পরীক্ষা স্থগিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ সদস্যের কাউন্সিলর বডির মধ্যে আজকে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত তিনজনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়া মারা গেছেন।
ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে এফসিপিএস পরীক্ষা স্থগিত করায় বিসিপিএসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তারা বলেন, এমন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সারা বিশ্বেই ডাক্তারদের পোস্টগ্রাজুয়েশন পরীক্ষাগুলো পেছানো হচ্ছে। প্রতিকূল এই মহামারীর সময়ে বিসিপিএসের এ সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।’
শসোমেক-এসএইচ ৯ এর ডা. আফসানা রুবাইয়া জেমি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিপিএসের এই চমৎকার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিনিয়ত করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডাক্তার হিসেবে আমরা নিজেরাও আতঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিতে হলে সেটা বরং বাড়তি মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতো।’
এফসিপিএস নিয়ে সাধারণ তথ্যসমূহ:
* FCPS মানে Fellow of the college of physicians & surgeons.
* BCPS ( Bangladesh college of physicians and surgeons) এই ডিগ্রিটি দিয়ে থাকে।
* এটি আমাদের দেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিগ্রি।
* প্রতি বছর জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
* ইন্টার্নশিপ শেষ করে বিএমডিসির পূর্ণ রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর একজন চিকিৎসক এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
Discussion about this post