اَخْلاَق (আখলাক্ব) শব্দটি বহুবচন। একবচনে خُلُقٌ (খুলুক্বুন)। শাব্দিক অর্থ স্বভাব, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। আর حَسَنَة (হাসানাহ্) শব্দের অর্থ সুন্দর, সৎ, উত্তম ইত্যাদি। সুতরাং اَخْلاَقِ حَسَنَة (আখলাক্বে হাসানাহ্) অর্থ হল সচ্চরিত্র ও উত্তম স্বভাব। একে আবার اَخْلاَقِ حَمِيْدَة (আখলাক্বে হামীদাহ্) বা ‘প্রশংসনীয় স্বভাব’ও বলা হয়। এর বিপরীত হচ্ছে اَخْلاَقِ شَنِيْعَة (আখলাক্বে শানী’আহ্) বা اَخْلاَقِ ذَمِيْمهْ (আখ্লাক্ব-ই যমীমাহ্) অর্থাৎ ‘মন্দ স্বভাব’।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, মানুষের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য সংশ্লিষ্ট আচার-আচরণ ও কার্যাবলী সুল্ড।, সুন্দর ও যথার্থভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে পালন ও সম্পাদন করাকে ‘আখ্লাক্বে হাসানাহ্’ বলা হয়। অন্যভাবে বলা হয় যে, ইসলামী চরিত্রে বিভূষিত হওয়া এবং শয়তানী চরিত্র থেকে বিরত থাকার নামই ‘আখ্লাক্বে হাসানাহ্’ বা উত্তম চরিত্র।
মানব জীবনে চরিত্র অমূল্য সম্পদ। চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। اَخْلاَقِ حَسَنَة বা اَخْلاَقِ حَمِيْدَة (উত্তম চরিত্র) এমন একটি মহৎ গুণ, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে উপস্থিত থাকা একান্ত প্রয়োজন। কেউ উত্তম চরিত্রের অধিকারী না হলে সে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনে কখনোই সক্ষম হয় না। উত্তম চরিত্রের কারণেই মানুষ মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে। এমনকি সে সর্বত্র স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয় না তাদের ইতিহাস। ইসলামের ধারক ও বাহক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সকল নবী ও রসূল আলায়হিমুস্ সালাম ও সাহাবায়ে কেরাম সচ্চরিত্রেরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই মানবেতিহাসের উষালগ্ন থেকেই সর্বকালে সর্বদেশে এর গুরুত্ব, মর্যাদা এবং উপকারিতা সর্বজন স্বীকৃত।
উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব
মানব জীবনে সৎ স্বভাব বা উত্তম চরিত্রের বিরাট গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রশংসনীয় ও সচ্চরিত্র ছাড়া কখনো প্রকৃত মানুষ বরং প্রকৃত মু’মিন হওয়া যায় না। রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওই উত্তম চরিত্রের প্রশংসায় পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-
اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیْمٍ (ইন্নাকা লা’আলা- খুলুক্বিন ‘আযী-ম) অর্থাৎ- হে রসূল! নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মানুষের সচ্চরিত্রের পরিপূর্ণতা প্রদানের লক্ষ্যে পাঠিয়েছেন। খোদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَکَارِمَ الْاَخْلَاقِ অর্থাৎ- ‘‘আমি উত্তম চরিত্রগুলোকে পরিপূর্ণতাদানের লক্ষ্যে প্রেরিত হয়েছি।’’ তিনি আরো বলেন- تَخَلَّقُوْا بِاَخْلَاقِ اللّٰہِ (তাখাল্লাক্বূ-বি আখ্লাক্বিল্লা-হি) অর্থাৎ- ‘‘তোমরা আল্লাহ্র চরিত্রে চরিত্রবান হও।’’
সচ্চরিত্র ছাড়া ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তির আশা করা যায় না। একমাত্র সৎ স্বভাব দ্বারাই সমাজে শান্তি আনয়ন করা সম্ভব। কেননা, চরিত্রহীন লোক অন্যায়, ব্যভিচার, অত্যাচার, সংঘাত, কলহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। পক্ষান্তরে, সচ্চরিত্রবান লোক নিজ চরিত্রগুণে সমাজ-চরিত্রকেও সংশোধনের চেষ্টা করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন- اِنَّ مِنْ اَحَبِّکُمْ اِلَیَّ اَحْسَنُکُمْ اَخْلاقًا (ইন্না মিন আহাব্বিকুম ইলায়্যা আহসানুকুম আখ্লাকান)। অর্থাৎ আমার কাছে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রিয় হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন- اِنَّ مِنْ خِیَارِکُمْ اَحْسَنُکُمْ اَخْلًاقًا (ইন্না মিন খিয়ারিকুম আহসানুকুম আখ্লাক্বান) অর্থাৎ নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হচ্ছে ওই ব্যক্তি, তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র অধিক সুন্দর।
বিখ্যাত ইংরেজ কবি Anon বলেন-
When wealth is lost, nothing is lost
When health is lost someting is lost
When character is lost everything is lost.
অর্থঃ যখন সম্পদ হারালো, তখন কিছুই হারালোনা, যখন স্বাস্থ্য হারালেৎ, তখন কিছুটা হারালো, আর যখন চরিত্র হারালো তখন সবকিছুই হারালো।
উত্তম চরিত্রের বিভিন্ন দিক
اَخْلاَقِ حَسَنَةِ (আখলাক্বে হাসানাহ) বা উত্তম চরিত্রের বিভিন্ন দিক ও বিষয়ে ইসলামে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। উক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে তাক্বওয়া, যিক্র, শোক্র, সবর, ইনসাফ, সহানুভূতি, পারোপকার, জনসেবা, সহনশীলতা, বিনয় ও অল্পে তুষ্টি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সমাজে এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন। মহান আল্লাহ এরশাদ ফরমায়েছেন- وَتَعَاوَنُوْا عَلٰی الْبِرِّ وَالتَّقْوٰی وَلاَ تَعَاوَنُوْا عَلٰی الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ‘‘ওয়া তা’আ’-ওয়ানূ- আলাল্ বির্রি ওয়াত্ তাক্বওয়া-ওয়ালা-তা’আ ওয়ানূ ‘আলাল্ ইস্মি ওয়াল ‘উদ্ওয়া-ন।’’
তরজমা : এবং তোমরা সৎকাজ এবং খোদাভীরুতার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো আর পরস্পরকে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না। [সূরা মা-ইদাহ, আয়াত- ২]
Discussion about this post