আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি হওয়ায় দেশটির সরকার শহরটির সব বাসিন্দার জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার(১৫জুন) দিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস টেস্টিং ফর অল-এর প্রস্তাব দেয়। দলটির এই প্রস্তাব ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
তবে দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিল্লিতে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও শহরটির দুই কোটি বাসিন্দার সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব। এই পরীক্ষায় কয়েকটি বিশেষ শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেয়া ছাড়া উপায় নেই।
রাজধানী দিল্লিতে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, ঠিক তখনই দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তারা করোনা টেস্টিং হঠাৎ কমিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ শহরের নানা প্রান্তে ঘুরেও করোনা টেস্ট করাতে পারছেন না। আবার পরীক্ষা করানো সম্ভব হলেও দীর্ঘদিন ধরে ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের সামনে বসে উর্মিলা মিশ্রা বলেন, আমার বাবার করোনা টেস্ট গত রবিবার হলেও আজ সাতদিন পরও তার রেজাল্ট আসেনি। আরএমএল হাসপাতাল বলেছিল, ফোন করবে। কিন্তু কোনও ফোন আসেনি।
টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ দীপিকা সিং গোয়েল এর আগেই অভিযোগ করেছিলেন, তার বয়স্ক মায়ের টেস্ট করিয়েও লেডি হার্ডিঞ্জ হাসপাতাল পাঁচদিন পরও রেজাল্ট দেয়নি। তিনি বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবাকে ডেকে শুধু বলা হয়েছে, রিপোর্টের ছবি তুলে নিয়ে যান। যেটা দেখিয়ে আমরা কোথাও মাকে ভর্তি করাতেও পারছি না।
এই পটভূমিতেই সোমবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে সবার জন্য কোভিড টেস্টের প্রস্তাব পেশ করে কংগ্রেস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সব দলই তাতে সায় দিয়েছে। পরে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির সব বাসিন্দাকে এখন টেস্টের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির এমপি সঞ্জয় সিং বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকের পর তিনি দাবি করেন, দিল্লির বিরুদ্ধে কম টেস্টিংয়ের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা ঠিক নয়। কারণ দিল্লিতে প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে পনেরো হাজারের টেস্টিং হয়েছে। এটা জাতীয় গড় তো বটেই, অন্য সব রাজ্যের চেয়ে দ্বিগুণ বা তারও অনেক বেশি। তারপরও আমরা টেস্টিং আরও বৃদ্ধি করবো। ২০ জুনের মধ্যে প্রত্যেকদিন অন্তত আঠারো হাজার টেস্টিং করা হবে বলে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
প্রত্যেকদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার টেস্ট হলেও দিল্লির প্রায় ২ কোটি মানুষের সবার পরীক্ষা করাতে গেলে পাটিগণিতের হিসেবে প্রায় তিন বছর লেগে যাবে। বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই বলছেন, টেস্টিং ফর অল আসলে একটি চমৎকার স্লোগান। বাস্তবতা হল আগে বাছাই করা কিছু লোকের টেস্ট করাতে হবে।
দিল্লির জেএনইউ-তে এপিডেমিওলজি ও জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক রাজীব দাশগুপ্ত বলেন, তিনি মনে করেন না দিল্লির প্রতিটি লোককে এভাবে টেস্ট করা সম্ভব। কারণ এটা পর্বতপ্রমাণ কাজ।
ডা. দাশগুপ্ত বলেন, এই বৈঠকের ইতিবাচক দিক হল, সবার টেস্ট’ বলতে যারা রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন ও তার পরিবারের লোকজন, হটস্পটের বাসিন্দা, আগে থেকেই অন্য রোগে ভুগছেন এমন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন কর্মী– তাদের সবার টেস্ট কিন্তু করতেই হবে।
তিনি বলেন, সবার একধারসে টেস্ট না-করে এই সাব-গ্রুপগুলোর করাটাই কিন্তু এপিডেমিওলজির দিক থেকে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। দিল্লিতে টেস্টিংয়ের হার যে অনেক বাড়াতে হবে, তা নিয়ে বৈঠকে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দলই। এখন সেটা কতটা বাড়ানো যাবে আর কাদের আগে টেস্ট করানো হবে, দেখার বিষয় সেটাই। বিবিসি বাংলা।
Discussion about this post