বিনোদনডেস্ক
সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে যেবার আমার প্রথম দেখা, তখন তিনি আরও তরুণ আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। চোখেমুখে খুশির ঝলক। কারণ, স্বপ্নের নায়ককে তিনি পর্দায় আনতে চলেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটার মাহেন্দ্র সিং ধোনিরূপে অনায়াসে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন ৩৪ বছরের এই তরুণ নায়কটি। নীরজ পান্ডে পরিচালিত ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে ধোনি হয়েছিলেন সুশান্ত। আজ তাঁর জীবনের অনেক কথা, অনেক যন্ত্রণা অব্যক্তই হয়ে রইল। কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নয়, কোনো চিরকুট নয়, অনেক প্রশ্ন রেখে অতর্কিতে, নীরবে চলে গেলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। রোববার দুপুরে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন এই তরুণ সুদর্শন সুপারস্টার।
প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিকে সুশান্ত জানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার ধোনির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা, পর্দায় তাঁর ধোনি হয়ে ওঠার কথা। ফিল্মি ক্যারিয়ারের শুরুতেই ধোনির বায়োপিকে কাজের সুযোগ পেয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ছিলেন সুশান্ত। ধোনির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের প্রসঙ্গে সুশান্ত বলেছিলেন, ‘আমি ধোনির অনেক বড় ফ্যান। আমার মনে আছে, ২০০৪ সালে তখন আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা মিস করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম।
একজন লম্বা চুলের ক্রিকেটারের স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করে। তাঁর ১৪০ রানের ইনিংস আমাকে অবাক করে। মনে হয়েছিল ক্রিকেট এ রকমই খেলতে হয়। ওই দিন থেকেই আমি ধোনির ফ্যান হয়ে যাই। এরপর খুব চেষ্টা করি ওনার সঙ্গে একটা ছবি তোলার। সেই চেষ্টাতে লেগে পড়ি। অবশেষে সুযোগ পাই। ধোনির সঙ্গে ছবি তুলি। সেই ছবিটা বাঁধিয়ে বাড়িতে সাজিয়ে রেখেছিলাম। আজ পর্দায় ধোনির চরিত্রে অভিনয় করছি। সত্যি আমার অবিশ্বাস্য লাগছে।’
পর্দায় ধোনি হয়ে ওঠার জন্য লম্বা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সুশান্ত। রাতের ঘুমকে বিদায় জানিয়েছিলেন। হোটেলের ছাদে খুব ভোরে উঠে ক্রিকেটের অনুশীলন করতেন সুশান্ত। তিনি চেয়েছিলেন যে ধোনির ভক্তরা তাঁকে পর্দায় দেখে কোনোভাবে যাতে হতাশ না হন। তবে সুশান্ত শুধু ধোনির ভক্তদেরই মন জয় করেননি। ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিটি মুক্তির পর রাতারাতি তাঁরও আকাশছোঁয়া ভক্ত জুটে যায়।
বলা যায়, এই ছবিটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পর্দায় এমএস ধোনি হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে সুশান্ত বলেছিলেন, ‘সবার আগে আমি ধোনির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করি। ওনার ভাবনাচিন্তা বোঝার চেষ্টা করি। ধোনি যখন কোনো কিছু নিয়ে ভাবেন, তখন ওঁর অভিব্যক্তি কী রকম থাকে, তা অনুসরণ করি। আর সব থেকে অবাক লাগত যে ধোনি কীভাবে নিজেকে এত শান্ত রাখতেন। আমি সবার আগে মানুষ ধোনিকে পড়ার চেষ্টা করেছি। তারপর ওনার খেলার স্কিল নকল করার চেষ্টা করি। ধোনির বাচনভঙ্গির ওপর অনেক কাজ করেছিলাম। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। তবে আমার দারুণ লেগেছিল। সাবেক উইকেটরক্ষক কিরণ মোরে আমাকে কিপিং শিখতে সাহায্য করেছিলেন। এক হাজারের থেকে বেশি শট খেলার পর আমার হেলিকপ্টার শট ঠিকঠাক হয়।’
ধোনিও সুশান্তের প্র্যাকটিসের ভিডিও দেখে জানিয়েছিলেন, সুশান্তের ভেতর তিনি নিজের ছায়া দেখেন।
Discussion about this post