নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনা মহামারির কারণে বন্ধ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বেসরকারি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ প্রায় তিন মাস। ফলে দিন দিন ভোগান্তি আর উদ্বেগ বাড়ছে তাদের, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অথচ অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘করোনার আগেই ঠিকমতো বেতন দিতে পারেনি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এখন এসব প্রতিষ্ঠানের কোনও আয় নেই। ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ। কিছু প্রতিষ্ঠানের আয় থাকলেও বেতন-ভাতা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগও রয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অধ্যক্ষ ড. আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, ‘মার্চে বেসিক বেতন দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে কলেজের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। টিউশন ফি আদায় হচ্ছে না, তাই বেতনও দিতে পারছি না।’
করোনা সংক্রমণ শুরু হলে গত ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সর্বশেষ নির্দেশনায় ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় টিউশন ফি আদায়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় না থাকায় গত ফেব্রুয়ারি থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে। কিন্ডার গার্টেনের অন্তত ছয় লাখ শিক্ষকও বেতন পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান জানান, মার্চে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিউশন ফি দিয়েছে। এরপর টিউশন ফি আদায় সম্ভব হয়নি। টিউশন ফি চাওয়া হলেও দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। ফলে ছয় লাখ শিক্ষক গত এপ্রিল থেকে বেতন পাচ্ছে না। অনেক কিন্ডার গার্টেন বন্ধও হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সদ্য সরকারি হওয়া প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষকদের এপ্রিল ও মে’র বেতন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গত ১৮ মে। প্রয়োজনে আমানত ভেঙে হলেও বেতন দিতে বলা হয়েছে। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক এবং নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও নির্দেশনা নেই।
চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় না করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও আহবান জানিয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘কারোনা পরিস্থিতিতে চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় না করতে বলা হয়েছে। তবে স্বচ্ছল অভিভাবকরা টিউশন ফি না দিলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেবে কীভাবে? বিষয়টি তাদের ভাবা উচিত। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপরেই চলে।’
Discussion about this post