নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৭৭ জন শিক্ষক টানা পাঁচ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহেন্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) এসব শিক্ষক বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মোট শিক্ষকের অর্ধেকের বেশি এই প্রকল্পের।
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বুধবার(১৭জুন) বলেন, শিক্ষকদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত ফাইল পাঠিয়েছিলাম। বাজেট অধিবেশনের কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা সময় নেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিন মাসের বেতন অনুমোদন হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফাইল ফেরত আসবে বলে আশা রাখছি।
প্রকল্পটি গত বছরের জুনে শেষ হয়। এরপর সরকার এ শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে বিলম্ব হওয়ায় গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে তারা আর কোনো বেতন-ভাতা পাননি।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের মৌখিকভাবে কাজ করে যেতে বলা হয়েছে। তারাও গত জুন থেকে ক্লাস নিচ্ছেন। তাদের ছয় মাসের বেতন-ভাতা বাকি হলে গত ডিসেম্বরে ছয় মাসের বকেয়া বেতন পেয়েছিলেন। তা আবার ধারদেনা শোধ করতেই শেষ হয়ে গেছে। তারা বর্তমানে আত্মীয়স্বজনের কাছ থকে ধারদেনা করে চলছেন। এখন দেশের এই দুর্যোগের মধ্যে আর কারও কাছে ধারদেনা চাইতেও পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত এক শিক্ষক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষকদের অনলাইনে নিয়মিত লাইভ ক্লাস নিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে আমরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি। অথচ নিয়মিত বেতন-ভাতা পাই না। আর্থিক এবং মানসিকভাবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি।
জানা গেছে, দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষক ১ হাজার ৪২৭ জন। তার মধ্যে রাজস্ব খাতে ৬৫০ জন, আর প্রকল্পের ৭৭৭ জন। শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালে স্টেপ প্রকল্প চালু হয়। তখন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে যোগ্য শিক্ষক দেওয়ার জন্য এ প্রকল্পের অধীনে এক হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। সাকুল্যে বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে (তখন স্কেল ছিল আট হাজার টাকার, ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে তা ১৬ হাজার টাকা হয়) তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই দফায় নিয়োগ দেওয়া মোট ১ হাজার ১৫ জনের মধ্যে থেকে ৭৭৭ জন শিক্ষক এখনও কর্মরত। বাকিরা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।
জানা গেছে, অভাবের তাড়না থেকে বাঁচতে বেতন-ভাতার জন্য এই শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছেন। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকা আছে। শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট অধিশাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট শাখায় গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হন বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকদের সংগঠন বিপিটিএফের সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের সব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। অথচ ছয় মাস বেতন নেই, গেল রমজান মাসেও বেতন ও উৎসব ভাতাদির কোনো খবর হয়নি। শিক্ষকদের মধ্যে এখন চরম হতাশা। তিনি বলেন, শিক্ষকরা ধারদেনা করে করোনার এই সময় পার করছে। তিন মাসের বেতন সেই ঋণ পরিশোধেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি বাকি তিন মাসের বেতন দ্রুত দেয়ার দাবি জানান।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুন্সী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, ছয় মাসের বেতন এই শিক্ষকরা পেয়েছিলেন, বাকিটাও দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post