অনলাইন ডেস্ক
প্রাণীদের মত উদ্ভিদ নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল ব্যবহার করে,কখনো এই কৌশল অন্য উদ্ভিদের ক্ষতির কারণ হয় আবার কখনো পারস্পরিক অসহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে বা অন্য উদ্ভিদকে কোন প্রকার ক্ষতি না করে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেরা বেঁচে থাকে।
এলিলোপ্যাথি হল একটি বায়োলজিক্যাল ব্যাপার যা সেই সব অণুজীব যারা একের অধিক বায়োকেমিক্যাল নির্গত করে যা অন্য অণুজীবের টিকে থাকা অঙ্কুরোদগম ও জীবনচক্র সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এই সব বায়োকেমিক্যাল গুলি এলিলোকেমিক্যাল নামে পরিচিত, এদের দ্বারা টার্গেট করা অণুজীব ও সম্প্রদায়ের উপর এদের উপকারী(positive allelopathy) ও অপকারী (negative allelopathy) প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।Allelopathy শব্দটি একটি গ্রীক শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হল allelo মানে “mutual harm” ও pathy মানে “suffering”. ১৯৩৭ সালে অস্ট্রিয়ান অধ্যাপক Hans Molisch প্রথম তাঁর জার্মান ভাষায় প্রকাশিত Der Einfluss einer Pflanze auf die andere-Allelopathie(The Effect of Plants on Each Other) নামক বইতে প্রকাশ করেন।
Chromolaena odorata (Eupatorium odoratum)
এলিলোকেমিক্যালস গুলো হল গৌণ বিপাকের subset.এদের(allelopathic organism) বিপাকের প্রয়োজন হয়না। (অর্থাৎ growth, development and reproduction) যাদের নেতিবাচক এলিলোপেথিক (negative allelopathic) প্রভাব আছে এগুলো তৃণভোজী প্রাণীদের বিরুদ্ধে উদ্ভিদের প্রতিরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এদের উৎপাদন কিছু জৈব ও অজৈব উৎপাদক দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় যেমন পুষ্টি উপাদান, তাপমাত্রা ও pH. এলিলোপ্যাথি বৈশিষ্ট্য বহনকারী কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিদ আছে যেমন algae, bacteria,coral ও fungi, এলিলোপ্যাথিক interactions উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতির সনাক্তকরণ,এদের বিন্যাস ও আধিক্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এছাড়াও কিছু কিছু আক্রমণকারী উদ্ভিদ সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। এই ব্যাপারে উদাহরণ হিসেবে কিছু উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করা যায়। যেমন: knapweed (Centaurea maculosa),garlic mustard (Alliaria petiolata), Casuarina/Allocasuarina spp,andnutsedge ইত্যাদি।
Garlic mustard (Alliaria petiolata)
উদ্ভিদের এইসব বৈশিষ্ট্যের জন্য পুষ্টি,পানি ও আলোর আধিক্য খুবই প্রয়োজনীয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যদিও এরা উপযুক্ত পরিবেশে উদ্ভিদের বেঁচে থাকার বয়স বাড়িয়ে দেয়। কোন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া আশে পাশের উদ্ভিদের মধ্যে বেঁচে থাকার প্রবণতাকে resource competition হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যাকে নেতিবাচক এলিলোপ্যাথি বলা যাবে না। অস্ট্রিয়ান অধ্যাপক Hans Molisch প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, বায়োকেমিক্যাল interactions এর ফলে আশেপাশে বসবাস রত উদ্ভিদের পরস্পরের বৃদ্ধি রহিত হয়। যেমন আজকাল বিশ্বের অনেক দেশে কৃষি ক্ষেত্রে আগাছা ও শস্যের মধ্যে এলিলোপ্যাথি ব্যবহার করে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে ও শস্য উৎপাদনে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই গবেষণার ফলে এলিলোকেমিক্যালসকে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করনে ও প্রাকৃতিক আগাছা নাশক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
Lantana camara (পুটুস)
১৯৯৩ সালে Sheeja নামক একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে Chromolaena odorata (Eupatorium odoratum) ও Lantana camara এর মধ্যে এলিলোপ্যাথিক ইন্টারেকশনের ফলে আশে পাশে জন্ম নেয়া উদ্ভিদ তৃণভোজী প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ তৃণভোজী প্রাণীদের উপস্থিতি টের পেলেই Lantana camara ও Chromolaena odorata বাতাসের মধ্যে এলিলোক্যামিক্যাল নিঃসরণ করে যার উপস্থিতি কোন অবস্থাতেই তৃণভোজী প্রাণীরা সহ্য করতে পারে না। যাঁরা প্রকৃতির প্রতি নজর রাখেন তাঁরা দেখবেন রাস্তার পাশে, রেললাইনের পাশে, জঙ্গলের পাশে অনাদরে অবহেলায় Lantana camara(পুটুস) ও Chromolaena odorata ফুল ফুটিয়ে তার আশে পাশে আরও কিছু অবহেলিত উদ্ভিদকে সাথে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে,কিন্তু কোন তৃণভোজী প্রাণী এদের কোন ক্ষতি করছেনা।এছাড়াও ইউক্যালিপটাস, ভেনেস্টার নামক কিছু উদ্ভিদ প্রজাতি একই পদ্ধতিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
আধুনিক গবেষণার ফসল হিসেবে বিজ্ঞানীরা ধানের(Oryza sativa)জিনগত পরিবর্তন করে খুবই শক্তিশালী এলিলোপ্যাথিক জাত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় Oryza sativa ‘র তুলনায় Oryza japonica তে অনেক বেশী এলিলোক্যামিকেলের সন্ধান পেয়েছেন। তাঁরা এটাকে ব্যবহার করে জাপানে ধানের অনেক উন্নত ফলন নিশ্চিত করছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কিন্তু আবাদি জমির পরিমাণ পৃথিবীর সৃষ্টির প্রথম ভাগে যা ছিল এখনো তাই আছে তবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে এমতাবস্থায় এলিলোকেমিক্যালের বদৌলতে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল। চার্লস ডারওইনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ছে সার্ভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট অর্থাৎ পৃথিবী এমন একটি জায়গা যেখানে শুধুই “যোগ্যতমের বেঁচে থাকা”।
Discussion about this post