অনলাইন ডেস্ক
হালকা ও মাঝারি উপসর্গের করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বহুল আলোচিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। শনিবার দেশটির মুম্বাইভিত্তিক ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস এক বিবৃতিতে এই ওষুধটি ভারতে ফ্যাবিফ্লু নামে উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
ওষুধটির উৎপাদন এবং বাজারজাত করার জন্য দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসকে অনুমতি দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস বলছে, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত প্রথম ওরাল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভির। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক গ্লেন সালডানহা বলেন, ‘এই ছাড়পত্র এমন এক সময় দেয়া হলো যখন ভারতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আমাদের আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি করছে।’
দেশের সব রোগী যাতে এই ওষুধটি সহজেই পেতে পারেন সেজন্য অন্যান্য কোম্পানি, সরকারের সঙ্গে ওষুধটির উৎপাদন করবে গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস। ফলে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মুম্বাইয়ের এই ওষুধ কোম্পানি।
সালডানহা বলেন বলেন, ফ্যাবিফ্লু ভারতে কোভিড-১৯ এর মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের রোগীদের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আশাব্যাঞ্জক ফল দিয়েছে। ইনজেকশনের বদলে এই ওষুধটি মুখে সেবন করা যাবে।
তিনি বলেন, ভারতে এই ওষুধটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিক্রি হবে। প্রত্যেকটি ট্যাবলেটের দাম পড়বে ১০৩ রূপি। প্রথম দিন দু’বারে মোট এক হাজার ৮০০ মিলিগ্রাম ডোজ ওষুধ সেবন করতে হবে। পরবর্তী ১৪ দিনে প্রত্যেকদিন দুবারে ৮০০ মিলিগ্রাম করে ডোজ সেবন করা যাবে।
মাঝারি থেকে মৃদু উপসর্গযুক্ত কোভিড-১৯ রোগী, যাদের ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসায় ফ্যাভিপিরাভির ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধটি মাত্র চারদিনের মাথায় রোগীর শরীরে ভাইরাল লোড দ্রুত কমিয়ে আনে।
ভারতে মৃদু এবং মাঝারি উপসর্গযুক্ত কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর ফ্যাভিপিরাভিরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছিল। এতে দেখা যায়, মৃদু এবং মাঝারি উপসর্গের করোনা রোগীদের ৮৮ শতাংশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস বলছে, তারা সফলভাবে ওষুধটির সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান (এপিআই) তৈরি করেছে এবং ফ্যাবিফ্লু তৈরির জন্য সেগুলোর মিশ্রণও নির্ধারণ করেছে।
২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ফুজিফিল্মের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি টয়ামা কেমিক্যাল কোং লিমিটেডের তৈরি অ্যাভিগানের জেনেটিক গোত্রীয় ওষুধ ফ্যাভিপিরাভিরের অনুমোদন দেয় দেশটির সরকার।
জাপানি এই কোম্পানি বলছে, অ্যাভিগান এক ধরনের অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ; যা মানবদেহে ভাইরাসের বংশবিস্তারে বাধা দেয়। এর আগে ইবোলা ভাইরাস চিকিৎসায় ফ্যাভিপিরাভির’র প্রয়োগ করেছিলেন গবেষকরা। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ভালো ফল পেয়েছিলেন তারা। তবে মানবদেহে এর কার্যকারিতা ঠিক কেমন- তা এখনও প্রমাণিত নয়। তবে গবেষকদের দাবি, মানবদেহে অ্যাভিগানের প্রয়োগে অপেক্ষাকৃত ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ওষুধটি চীনের উহান ও শেনঝেন অঞ্চলের অন্তত ৩৪০ জন করোনা রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। গত মার্চে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ঝ্যাং শিনমিন বলেন, ‘এটি খুবই নিরাপদ ও চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে।’
সেই সময় জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানায়, শেনঝেন অঞ্চলে যেসব রোগীকে ফ্যাভিপিরাভির দেয়া হয়েছিল তারা মাত্র চারদিনের মধ্যেই করোনামুক্ত হয়েছেন। বিপরীতে, অন্য ওষুধ ব্যবহারকারীদের সুস্থ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১১ দিন। এক্স-রেতেও দেখা গেছে, ফ্যাভিপিরাভির ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯১ শতাংশের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অন্য ওষুধ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এর হার ৬২ শতাংশ।
চীনের মতো জাপানেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে স্বল্প ও মাঝারি মাত্রায় উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের চিকিৎসায় ফাভিপিরাভির ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে জাপানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই ওষুধ গুরুতর উপসর্গ সম্পন্ন রোগীদের চিকিৎসায় খুব একটা কার্যকর হয়নি। একই ফলাফল দেখা গেছে এইচআইভির ওষুধ লোপিনাভির ও রিটোনাভিরের মিশ্রণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
ফুজিফিল্ম বলেছে, করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের অংশ হিসেবে প্রথম দুই ধাপ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে অ্যাভিগান। এখন তারা আশা করছেন, মানবদেহে প্রয়োগেও এর আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।
ভারতে শনিবার নতুন করে আরও ১৪ হাজার ৫১৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; যা একদিনে সর্বোচ্চ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৫ জন নিয়ে দেশটিতে মারা গেছেন ১২ হাজার ৯৪৮।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এনএইচকে।
Discussion about this post