তৌফিক মারুফ
উপসর্গ থাকলে পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এলেও আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসার আওতায় থাকতে হবে। আক্রান্তদের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ আরটিপিসিআরে অনেক ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ আসতে পারে। তবে আরটিপিসিআরে ফলস পজিটিভ আসে না। অন্যদিকে অ্যান্টিবডি টেস্টে ফলস নেগেটিভ-পজিটিভ দুটিই আসতে পারে। এ জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ এবং উদ্বেগ দুটিই রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো পরীক্ষায় ফলস রেজাল্টের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন ওই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ, সংগ্রহের পর নমুনা পরিবহন এবং ল্যাবে পরীক্ষাপ্রক্রিয়ায় কোনো না কোনো গলদ বা ত্রুটি থাকে। কোনো ধরনের গলদ না হলে আরটিপিসিআর কিংবা অন্য পদ্ধতিতে ফলস রেজাল্টের প্রশ্ন থাকে না। এ অবস্থায় সঠিক মাত্রায় প্রটোকল না মানা কিংবা মান সংরক্ষণ করতে না পারার কারণেই আরটিপিসিআরে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। যত বেশি গলদ থাকবে তত বেশি ফলস রেজাল্ট পাওয়া যাবে। গলদ না থাকলে ফলস রেজাল্টের সুযোগ ০ শতাংশ। এ কারণে পরীক্ষার প্রতিটি স্তরে উপযুক্ত মান সংরক্ষণই এখন প্রধান কাজ।’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ল্যাবরেটরি টেস্টে যেকোনো হারে, যেকোনো কারণে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে। তাই যাদের উপসর্গ থাকবে তাদের রিপোর্টের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ধরনের মহামারির সময় এটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি করোনামুক্ত বা ল্যাব টেস্টে নেগেটিভ হয়, আর এই সময়টায় যদি উপসর্গ থেকে যায়, তখন উপসর্গের চিকিৎসাটাই জরুরি। কারণ, করোনার কারণে ওই উপসর্গ গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রটোকলে বলা আছে, পরীক্ষা হোক বা না হোক, উপসর্গ থাকলে অবশ্যই আইসোলেশনে থাকতে হবে। মৃদু উপসর্গ হলে বাসায়, মাত্রা বেশি হলে হাসপাতালে যেতে হবে। চিকিৎসকরা তখন প্রয়োজন অনুসারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘চীনের যে বিশেষজ্ঞ দল এসেছিল, তারাও বারবার জোর দিয়ে বলেছে উপসর্গকে অগ্রাধিকার দিতে। যাদের উপসর্গ থাকবে তাদের আগে পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। আরটিপিসিআরের তুলনায় অ্যান্টিবডির রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকায় চীনের বিশেষজ্ঞরা আমাদের সতর্ক করেছেন অ্যান্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে। কারণ, কারো ফলস নেগেটিভ আসা যেমন বিপদ, ফলস পজিটিভ আসাও হয়রানির।’
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘ফলস নেগেটিভ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলেই আমরা আমাদের রিপোর্টের নিচে নোট দিয়ে বলি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই টেস্টের রিপোর্টের পাশাপাশি উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যাদের মধ্যে যখনই উপসর্গ দেখা যাবে তখনই তাদের চিকিৎসার আওতায় নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে আরটিপিসিআর টেস্ট এবং অ্যান্টিবডি টেস্টকে মিলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুটি দুই বিষয়। একটি হচ্ছে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা শনাক্ত করা। আরেকটি হচ্ছে কেউ আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না। কেউ সুস্থ হয়ে গেলে যেমন আরটিপিসিআরে ফল নেগেটিভ আসবে, তেমনি কেউ আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর সুস্থ না হলে অ্যান্টিবডি পজিটিভ আসবে না। ভাইরাস শরীরে থাকলে যেমন আরটিপিসিআরে পজিটিভ আসবে, তেমনই অ্যান্টিবডি টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। তবে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা দেখার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট কাজে দেবে না।
Discussion about this post