এম, সারওয়ার
করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। এ অবস্থায় সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং তার আরও বিস্তাররোধে শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে কয়েক ধাপে তা বর্তমানে ৬আগষ্ট পর্যন্ত বেড়েছে। শিক্ষাংগনের এই স্থবিরতা ঘোচাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্যও একইভাবে চালু করা হয়েছে টিভিতে সীমিত আকারে পাঠদান।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি অনুমোদন নিয়ে ‘জুম’ অ্যাপস ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সীমিত আকারে তাদের পাঠ ও পঠন চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিছু সরকারী কলেজ তাদের ফেসবুক পেইজে এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদান চালু রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তবে সরকারী বেসরকারী সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও অনলাইন শিক্ষাসেবায় আগ্রহী নন কিংবা প্রচেষ্টা নিয়েও সফল হননি।
এর মাঝে ব্যতিক্রমী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় অবস্থিত কলেজ অব সায়েন্স বিজিনেস এন্ড হিউমিনিটিজ(CSBH)। বাংলা ভার্সন ও ইংরেজী ভার্সনে ( ন্যাশনাল কারিকুলাম)পরিচালিত চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত এই কলেজটি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন চলমান রাখতে করোনাকালের সূচনালগ্ন থেকে অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিক শাখার নিয়মিত শ্রেণি পাঠদান, শ্রেণি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে চালিয়ে আসছে।
এ প্রসংগে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা স্বনামখ্যাত ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ সেন্টার এক্সিকিউটিভ’স কেয়ার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহরাব মাসুক,এমবিএ (আইবিএ) বলেন,শিক্ষাংগনের এই চরম স্থবিরতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সাথে যুক্ত রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।অন্যদিকে আমরা বন্দরনগরীর অন্যতম ডিজিটাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে।তাই শুরুতেই পরিকল্পনা করি আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যেন কোনক্রমেই পিছিয়ে না পড়ে! তাই সিএসবিএইচ-এ বিজ্ঞান,বাণিজ্য ও মানবিক সকল শাখার শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে ক্লাস করছে ১৮ মার্চ থেকে। প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৪টি করে ক্লাস করেছে।ফলে যথাসময়ে প্রথম বর্ষের সিলেবাস শেষ হয়েছে এবং ২০ এপ্রিল তারিখে আমরা প্রথম বর্ষ সমাপণি পরীক্ষাও নিয়েছি।১৪ মে প্রকাশিত ফলাফলে এই পরীক্ষায় ২৯১ জন অংশগ্রহণ করে ২৫৪ জন উত্তীর্ণ হয়।ঈদের বন্ধের পরে ৩ জুন থেকে পুনরায় ২য় বর্ষের পাঠদান শুরু হয়েছে।আশা করছি সঠিক সময়েই আমরা সিলেবাস শেষ করে নির্বাচনী( টেস্ট)পরীক্ষা নিতে পারব।
অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থাপনা সম্মন্ধে জুম ক্লাস কনভেনর প্রভাষক আহসান হানিফ এবং হোয়াট’স এ্যাপ ক্লাস কনভেনর প্রভাষক মৈত্রী ঘোষ বলেন, আমাদের লেখাপড়া এক সপ্তাহও ব্যাঘাত হয়নি কারণ ডিজিটাল কলেজ হিসেবে এখানে অনলাইনের অবকাঠামো আগে থেকেই তৈরি ছিল। তাই যথাযথ পরিকল্পনা করে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই অনলাইনে শিক্ষাদান শুরু করতে সক্ষম হয়েছি।এ ক্ষেত্রে আমরা শুরুতে হোয়াট’স এ্যাপে ও পরে জুম এ্যাপে ক্লাস শুরু করি।এতে ছাত্রছাত্রীরা ভীষণ উৎসাহ নিয়ে ক্লাস করে এবং নিয়মিত ক্লাসটেস্টেও অংশ নেয়।সুনির্দিষ্ট এসাইনমেন্ট এবং এমসিকিউ ও সৃজনশীল প্রশ্নের মাধ্যমে নেয়া হয় বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা ।
অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুবীর দাশ, অধ্যাপক সুহাস চন্দ্র চৌধুরী,অধ্যাপক দীপক দাশ,অধ্যাপক মৃদুল কান্তি এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক বিমল কান্তি মজুমদার।
অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস নিলেও পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি! সিএসবিএইচ এর পক্ষে এটি কিভাবে সম্ভব হলো ?এমন প্রশ্নের জবাবে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা মেহরাব মাসুক বলেন, আপনারা জানেন আমরা আন্তর্জাতিক মানের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ সেন্টার পরিচালনা করি যেখানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে IELTS,TOEFL,SAT,GRE এর মত আন্তর্জাতিক কোর্সসমূহ ।যেখানে শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সকল পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আমরা IELTS ও TOEFL এর আন্তর্জাতিক টেস্টসেন্টার এর স্বীকৃতি লাভের গৌরবও অর্জন করেছি।ফলে অনলাইনে যেকোন ধরণের পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।
এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র আহনাফের উচ্ছসিত কন্ঠ- হোয়াটস এ্যাপে এবং জুম এ্যাপে প্রতিদিন ক্লাস করেছি।সরাসরি না হলেও পরস্পর সংযুক্ত ছিলাম আমরা, এটি দারুণ ছিল! পরীক্ষা দিয়ে ১ম বর্ষ থেকে ২য় বর্ষে উঠেছি, যখন অন্য কলেজের বন্ধুরা এখনও ১ম বর্ষে!আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষার এসাইনমেন্ট করেছি -এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ভয় যেমন ছিল, ভালো লাগাটাও ছিল। কারণ এই প্রথম এমন এসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়া। স্যারেরা খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করেননি।গণিত, পদার্থ, রসায়নের গাণিতিক সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ সমাধান করে তবেই সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করতে হয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার অনুভূতিগুলো ছিলো এক কথায় অন্যরকম।
শিক্ষার্থী হাসিন আনোয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,অনলাইনে একাডেমিক পরীক্ষা দেয়ার অনুভূতি সত্যিই রোমাঞ্চকর!করোনাসংকটে আমরা অনেকেই চট্টগ্রাম শহর এলাকায় ছিলামনা।আমাদের অনেক বন্ধু রাজশাহী, নোয়াখালী, বান্দরবান, ক্ক্সবাজার জেলা থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।নেটের সংযোগজনিত যে কোন সমস্যায় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিশেষ হেল্পলাইন আমাদের সহযোগিতা করেছে।পরীক্ষকগণ সারাক্ষণ এমনভাবে মনিটর করেছেন যেন আমরা সবাই একই পরীক্ষার হলে রয়েছি।পরীক্ষার শেষে অংশগ্রহণ তালিকায় ২৯১ জন পরীক্ষার্থীর নাম ছিল সত্যিই চমকপ্রদ!
করোনা সংকটে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন অভিভাবকমহল। সরকারী বা বেসরকারী অন্যান্য কলেজগুলোও সিএসবিএইচ এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে লক্ষ ছাত্রছাত্রী উপকৃত হতো বলে তাঁদের অভিমত।
Discussion about this post