নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সময়সীমা বাড়িয়ে এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর করা হয়েছে। আর ভর্তির জন্য বসয়সীমা পরিবর্তন করে পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর অনুমোদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছর থেকে আমরা পাইলটিং শুরু করবো। প্রথম বছরে কিছু কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীরা চার বছরের ভর্তি হতে পারবে আর দুই বছরের প্রাক প্রাথমিক ক্লাস নেয়া হবে। পরবর্তীতে সব স্কুলে দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক চালু করা হবে।
‘আর্লি চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কে ফরমাল এডুকেশন শুরু করার আগে দুই বছর non-formal বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা উল্লেখ আছে এসব বিষয় মাথায় রেখেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে কার্যকর হবে বলে আমি মনে করছি’, যোগ করেন মহাপরিচালক।
১ম বছর কতগুলো স্কুলে পাইলটিং শুরু করা হবে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, প্রথম দফায় কতগুলো স্কুলে পাইলে টিম শুরু হবে তা নির্ধারণ করতে খুব শিগগিরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন।
জানা গেছে, গত ১৬ জুন প্রাক প্রাথমিকের সময়সীমা দুই বছর ও ভর্তির ক্ষেত্রে চার বছর বয়সসীমা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক স্তর পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদী শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এ স্তরে অর্জিত সাফল্য ও অভিজ্ঞতা অর্জনে চার বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য দুই বছর মেয়াদি করতে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে এই প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রস্তাবে বলা হয়, বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ঝড়ে পড়ার হার ছিল ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ আর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। কাজেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সাথে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস পাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিদ্যালয়ে এ স্তরটি চালুর পর শিক্ষার্থী ভর্তি হার বৃদ্ধি, উপস্থিতি ও পাসের হার বেড়েছে। দেশে এ স্তরটি দুই বছর মেয়াদি না হওয়ায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে, এতে অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
প্রস্তাবে এটি বাস্তবায়নে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো– প্রাক-প্রাথমিক স্তর দুই বছর মেয়াদি কার্যকর করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি, দুই বছর মেয়াদী এ স্তরের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও শিখন সামগ্রী উন্নয়ন করা, শিশুর বিকাশ ও যত্নের সাথে সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা, অবকাঠামোগত বিদ্যামান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ক্লাস্টারে ১টি করে মোট ২ হাজার ৫৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা এবং কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকের সহায়তায় শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
এ জন্য পরবর্তী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক প্রাথমিক স্তর চালু করা হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা ও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিশুদের অধিকতর যত্ন প্রয়োজনে স্কুলে একজন করে আয়া নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাক প্রাথমিক স্তরের ক্লাস রুম উপযোগী করে তুলতে সারাদেশে নতুন করে আরও ৩০ হাজার ‘ডেডিকেটেড ক্লাসরুম’ বা ‘শিশু উপযোগী শ্রেণিকক্ষ’ নির্মাণ করা হবে। প্রাক প্রাথমিকের ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
Discussion about this post