শেখ আনোয়ার
যে কোন মাপের একটি স্বচ্ছ কাচ অথবা প্লাস্টিকের বোতল নাও। বোতলের মুখ পর্যন্ত কানায় কানায় পানি ভরে তাতে কিছু জল রঙ ঢেলে দাও। দেখবে বোতলের সব পানি রঙিন হয়ে গেছে।
এবার বোতলের মুখটি কর্ক বা ছিপি দিয়ে খুব টাইট করে আটকাও। অবশ্য আগে থেকেই এই ছিপি বা কর্কটি সুক্ষ্মভাবে ছিদ্র করে নেবে এবং তার মধ্যে একটি চিকন প্লাস্টিকের নল ঢোকাবে। ছিপির যে ছিদ্র দিয়ে প্লাস্টিকের নল ঢোকানো হয়েছে তার গোড়ায় শক্ত আঠা লেপ্টে দাও যাতে বাতাস বা পানি ঢুকতে কিংবা বেরুতে না পারে।
মনে রাখবে, নলের উপর উঠে আসা রঙিন পানির উচ্চতা দেখে তাপমাত্রার পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এবার বোতলটি বরফ গলা পানির মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখো। এই অবস্থায় নলের মধ্যে রঙিন পানি যতটা উচ্চতায় উঠে আসবে ঠিক সেই উচ্চতাকে শূন্য ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড হিসেবে কলম দিয়ে চিহ্নিত করে রাখো।
তারপর চিকিৎসকদের ব্যবহৃত থার্মোমিটার দেখে দেখে তুলনা করে তাপমাত্রার বাকি উচ্চতাগুলোর বিভিন্ন একক চিহ্নিত করে নলের উপর এঁকে নাও।
ব্যস। তোমার হাতে বানানো থার্মোমিটার এবার তাপ পরিমাপ করার জন্য প্রস্তুত। এখন পুরো বোতলটি রোদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা রাখো। খেয়াল করলে দেখতে পাবে যে, নলের ভেতর রঙিন পানি কিছুটা উপরে উঠে স্থির হয়ে রয়েছে। নলে যেখানে রঙিন পানি স্থির হবে সেখানকার লেখা পড়ে দেখো, তাপমাত্রা কতো চিহ্নিত করে লেখা রয়েছে। আর এটিই হচ্ছে সেই সময়ের সূর্যের উত্তাপের পরিমাপ।
প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে কাজ করে এই থার্মোমিটার?
স্বচ্ছ বোতলের রঙিন পানি রোদে রাখার কারণে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতায় উত্তপ্ত হয়। একই সঙ্গে পানির পরমাণু সম্প্রসারিত হতে হতে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। বোতলের ভেতর সম্প্রসারিত এই রঙিন পানি স্বচ্ছ নলটিকে ফাঁকা পেয়ে তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপরে উঠে আসে। একই প্রক্রিয়ায় বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায়; যখন বোতলের পানি ঠাণ্ডা হয়ে যায় কিংবা ঠাণ্ডা স্থানে রাখা হয়। আমরা সচরাচর পারদ দিয়ে নির্মিত যে থার্মোমিটার ব্যবহার করে আসছি তা ঠিক একই সূত্র অনুযায়ী বানানো এবং একইভাবে তাপ পরিমাপক হিসেবে কাজ করে থাকে।
লেখক পরিচিতি: শিশু–কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। অগ্রণী ব্যাংক–বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শেখ আনোয়ারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২।
Discussion about this post