শাহেদ শফিক,বাংলা ট্রিবিউন
প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি প্লাজমা থেরাপি। কিন্তু করোনা চিকিৎসায় এ পদ্ধতি নিশ্চিত কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি না হলেও গবেষকরা বিভিন্ন পর্যায়ে এর সুফল পেয়েছেন। তাই মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্লাজমা দানের জন্য একটি ‘প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্লাজমা সংগ্রহ করতে পারবেন। আবার সুস্থ্য ব্যক্তিও এতে প্লাজমা দানও করতে পারবেন।
জানা গেছে, সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি’র সঙ্গে আরও ৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৪টি সংগঠন মিলে এ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এ উদ্যোগে যারা সহযোগী হয়েছেন তারা হলেন- শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউট, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), গাজী গ্রুপ, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন, মেয়র আতিকুল ইসলামের প্ল্যাটফর্ম ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’, ও ওলওয়েল ডটকম। করোনাজয়ীদের তথ্য সংগ্রহ, ডাটা বেইজ তৈরি, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করার উদ্দেশ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মূল প্রতিপাদ্য ‘মহৎ কাজে প্লাজমা দান, এগিয়ে আসুন বাঁচবে প্রাণ’।
প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্যোক্তাদের একজন ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসির নির্বাহী সদস্য শাহনাজ শারমীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্লাজমা সেন্টারের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৪০ স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। তারাই এটি পরিচালনা করছেন। আর প্লাজমা যোদ্ধাদের প্লাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে। বিগত এক মাস ধরে এই প্লাটর্ফম পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। ইতোমধ্যে ৩৬ রোগীকে প্লাজমা সংগ্রহ করে দিয়েছে ‘প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার’।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনাজয়ী ও প্লাজমা দানে সক্ষম যে কেউ প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের দুটি ফোন নম্বরে ফোন করে প্লাজমা দান করতে পারবেন। ফোন নম্বর দুটি হলো ০১৮৪১১৮৮০২৪-২৫। আর চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে সেই প্লাজমা সংগ্রহ করা যাবে। এছড়া প্লাজামা সাপোর্ট সেন্টারের ফেসবুক পেইজে গিয়েও যোগাযোগ করা যাবে। তবে আমাদের একটা শর্ত রায়েছে যিনি প্লাজমা নিতে আসবেন তিনি ফর্ম পূরণ করে যাবতীয় তথ্য দেবেন এবং যার জন্য প্লাজমা তিনি সুস্থ হলে ডোনার হবে।
সবাই মিলে সবার ঢাকার প্রতিনিধি তৌফিক রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে প্লাজমা দান করতে চান তারা প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আর যারা প্লাজমা খুঁজছেন তারাও প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের ওয়েবলিংকে রিকুইজিশন যুক্ত করে ফোন করতে পারেন।
এদিকে শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে উত্তর সিটি করপোরেশন নগর ভবনে এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই প্লাজমা দিয়ে যদি একটি প্রাণ বাঁচে এর চেয়ে মহৎকাজ আর কিছুই হতে পারে না। তবে প্লাজমা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দিতে হবে। প্রেসক্রিপশন না আনলে আমরা প্লাজমা দেবো না। যিনি প্লাজমা দিবে তিনিও জানতে পারবেন তার প্লাজমাটা কে পাচ্ছেন। আর যিদি প্লাজমা নিবেন তিনিও জানতে পারবেন তার প্লাজমাটা কার? এ নিয়ে কোনও ভ্রান্তি রাখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, প্লাজমা নিয়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কাজ করছে। সেটিকে নির্মূল করতে আমরা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। এই মেসেজটা আমরা সবাইকে দিতে চাই। এটা আমরা শুধু ঢাকায় শুরু করেছি। এটা যদি সফল হয় তাহলে আমরা অবশ্যই সারা দেশে চালু করবো।
যুবকদের প্লাজমা ডোনেট করার আহ্বান জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, যে সমস্ত যুবক করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন, তারা যেন ৬০০ মিলিগ্রাম প্লাজমা ডোনেট করেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের। এ ৬০০ মিলিগ্রাম প্লাজমা দিয়ে তিনজন রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। প্লাজমা দিয়ে অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন। এর মাধ্যমে অনেক পরিবার বেঁচে যাবে। প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার একটি সেতুবন্ধন। এ সেন্টার মানুষের জন্য কাজ করবে। পয়সা কামানো বা ব্যবসা করা আমাদের কাজ না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, অনেকে প্লাজমা নিয়ে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এই মহতী উদ্যোগের সাথে সরকার সমসময় পাশে আছে বলেও জানান তিনি।
এতে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের সহকারি অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক, ওলওয়েল ডটকমের সম্বন্বয়ক ডা. তুষার মাহমুদ, বাঁধন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রকীব আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ। ভিডিও বার্তা ও সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন, ডা. সামন্তলাল সেন, স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান ও বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক।
Discussion about this post