বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বৈশ্বিক মহামারি করোনা যেন তার ভয়াবহতাকে দিন দিন নতুনভাবে দেখিয়ে চলেছে। প্রতিদিন বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়ায় এখনো চলছে বিভিন্ন ধরনের ট্রায়াল। তেমনই একটি ট্রায়াল প্লাজমা থেরাপি। এটি অনেক পুরাতন পদ্ধতি। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্লাজমা থেরাপি বেশ জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
হতাশার কথা হচ্ছে, চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না প্লাজমা। কেউ কেউ করোনা থেকে সুস্থ হয়েও প্লাজমা দিতে চাচ্ছেন না। কেউ ভয় পাচ্ছেন, কেউ নিজ পরিবারের প্রয়োজনে রেখে দিচ্ছেন। এই করুণ অবস্থা লক্ষ্য করে প্লাজমা ডোনার কালেকশনে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়।
করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন নিজেও। সুস্থ হয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্লাজমা দিয়েছেন দুইবার, প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ(কভিড-১৯)🇧🇩’ নামের ফেসবুক গ্রুপ। মূলত ডোনার সংগ্রহ করে যোগাযোগ স্থাপন করে দেন রোগীর পরিবারের সাথে।
প্রতিদিন প্লাজমা ডোনার খুঁজে খুঁজে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরকে প্লাজমা ম্যানেজ করে দিচ্ছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন জেলায় থাকা প্রতিনিধি। আশেপাশে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য তারা রেকর্ড করে রাখেন, প্লাজমা দেয়ার জন্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলেই তাদেরকে নক করেন। উৎসাহিত করেন প্লাজমা দিতে। তাদের এ উদ্যোগকে অনেকেই প্রশংসা করছেন, উপকৃত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ইসতিয়াক জানান, প্রায় মাসখানেক আগে প্রথমে একটি গ্রুপ খুলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা অনলাইনে আলোচনা করি। পরিকল্পনা করি। তারপর জেলাভিত্তিক বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা বেশ সাড়া পাই। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে ডোনার ম্যানেজ করে দিতে পারতেছি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ কাজে আমাকে ডোনার দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির ওয়ারী জোনের এসি জনাব মো. হান্নানুল ইসলাম এবং ডিএমপির প্রোটেকশন বিভাগের সহকারী কমিশনার জনাব মো. ইমরান হোসেন মোল্লা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ঘুমের সময়টা ছাড়া বাকি সময় আমি এই প্লাজমা ডোনার কালেকশন এবং পেশেন্টের পরিবারের মাঝে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কাজেই ব্যস্ত থাকি। আমাদের এই গ্রুপের কোনো ডোনারের অর্থনৈতিক চাহিদা নেই এবং তেমন ডোনারদের সাথে আমরা কাজও করি না। এখানে যারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং প্লাজমা ডোনেট করে যাচ্ছেন প্রত্যেকেই স্বেচ্ছায় এবং নিঃস্বার্থভাবে। করোনার ভয়াবহতা বাংলাদেশে যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের এ কার্যক্রম চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
প্লাজমা কালেকশনের এই সময়োপযোগী প্লাটফর্মে ইসতিয়াকের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ফারজানা ইয়াসমিন অনন্যা, সাদ্দাম হোসেন উদয়, হাবিব রহমান, জান্নাতুল ইসলাম মুনা, অভ্রনিল অর্ক, আমজাদ হোসেন হৃদয়, মাইনুল হোসাইন রাব্বি, রাহাদ শাকিল প্রমুখ। অন্যদিকে ইডেন কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত আছেন এই মানবিক এই প্লাটফর্মে।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত এই গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ৬০ জন রোগীকে প্লাজমা দেয়া হয়েছে এবং প্রায় ২০ জন রোগীকে জরুরি রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post