অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জাপান ডেস্কের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।গত সোমবার (২৯ জুন)প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ডেস্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভার্চুয়াল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ সময় এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, সিনিয়র সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ; ড. মো. জাফর উদ্দীন, সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; ইতো নাওকি, রাষ্ট্রদূত, জাপান দূতাবাস; ড. আরিফুল হক, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও; ইউহো হায়াকাওয়া, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, জাইকা; ইউজি অ্যান্ডো, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, জেট্রো অতিথি হিসেবে যোগদান করে বক্তব্য রাখেন।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কার্যক্রম ও বাণিজ্য সম্ভাবনা বিষয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান এবং বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি মাহবুব জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেসিস জাপান ফোকাস গ্রুপের আহবায়ক এবং বেসিসের পরিচালক রাশাদ কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান ও পুনর্গঠনে জাপানের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উভয় দেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেসিস জাপান ডেস্কের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, জাপানে বাজারে আমাদের ব্যবসা প্রসারের জাপানি ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করা প্রয়োজন। এজন্য তরুণ উদ্যোক্তাদের জাপানি ভাষা শেখার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সফটওয়্যার একটি অদৃশ্য পণ্য হলেও সবসময় এমনকি করোনা মহামারির এই সময়েও এর প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে তথ্যপ্রযুক্তিখাত দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত হিসেবে পরিচিতি পাবে এবং এ খাতে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বেসিস জাপান ডেস্কের পাশাপাশি জাপানের টোকিওতেও একটি বাংলাদেশ ডেস্ক খোলার ব্যাপারেও অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি বেসিসের প্রতি আহ্বান জানান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে পেশ করার জন্য বেসিস সভাপতিকে পরামর্শ দেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের প্রকৃত উন্নয়নে বেসিস জাপানের আইটি মার্কেট অন্বেষণ এবং বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের সুবিধার্থে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জাপানে বাংলাদেশের আইটি শিল্পের রফতানি বাড়িয়ে তুলতে এই ডেস্ক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
জাপানের আইটি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে বেসিস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বেসিস জাপানের বাজারে বাংলাদেশি আইটি কোম্পানিগুলোর অবস্থান ও আস্থা তৈরিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বেসিস জাপান ডেস্কের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর তার বক্তব্যে বলেন, বেসিস জাপান ডেস্ক জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার একটি কার্যকরী মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০টি বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান জাপান ডেস্কে মাসিক ফি প্রদানের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই ডেস্ক বেসিস সদস্যদের জাপানে ব্যবসা সম্প্রসারণে এবং জাপানি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ অফশোর ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপনে উৎসাহিত করবে।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বেসিস জাপান ডেস্ক চালুর এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বেসিসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেসিস জাপান ডেস্ক কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে বক্তারা প্রত্যাশা করেন। জাপানে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে তুলে ধরা এবং জাপান থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে বেসিস জাপান ডেস্ক সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করবে।
করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ‘বেসিস জাপান ডেস্ক’ বিশেষভাবে জাপান মার্কেটের ওপর কাজ করবে। এই ডেস্কের কাজের অংশ হিসেবে থাকবে বি টু বি ম্যাচমেকিং; জাপানি আইটি কোম্পানির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন; জাপান মার্কেটের ওপর গবেষণা; জাপানে অনুষ্ঠিত সকল ইভেন্টে অংশগ্রহণ; জাপানি ব্যবসা এবং সংস্কৃতির ওপর গ্রুমিং সেশন; জাপান হতে আগত ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগ সম্পর্কে জানানো ইত্যাদি।
এসকল পদক্ষেপ জাপানে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে এবং এই খাত থেকে রপ্তানি আয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক বেসিস সদস্য এই সেবার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এই সেবা সরবরাহের জন্য একটি নির্দিষ্ট ই-মেইল অ্যাড্রেস ও ফোন নাম্বার থাকবে।
এ প্রসঙ্গে বেসিসের পরিচালক এবং বেসিস জাপান ফোকাস গ্রুপের ডিরেক্টর ইনচার্জ রাশাদ কবিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিগত ৩/৪ বছরে বাংলাদেশের আইটি কোম্পানিগুলো জাপান মার্কেটে অনেক ভালো কাজ করছে, ৫০টিরও বেশি আইটি কোম্পানি বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ জাপান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। যদি এই মার্কেটকে আমরা সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারি, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুধু জাপান মার্কেট থেকেই বছরে হাজার কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আগামীদিনে জাপান মার্কেটে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর অবস্থান কেমন হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে এখনকার সময়ে আমাদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজির ওপর। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
Discussion about this post