ফারুক তাহের
চট্টগ্রামের কিছু ফার্মেসিতে কোনও কোনও ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে এর প্রমাণও পেয়েছেন বহুবার। জড়িতদের দণ্ড দিয়ে এবং বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান সিলগালা করে দেওয়া হলেও থামছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন জরুরি ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় করোনা ছাড়াও অন্য রোগীরাও পড়েছেন দুর্ভোগে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই হঠাৎ করে ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। সিজনাল ফ্লু বা সাধারণ অসুখে আক্রান্ত হওয়া রোগীরা ওষুধের দাম নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। দাম বেশি হলেও না কিনে অন্য কোনো উপায় থাকেনা ক্রেতাদের। ফলে চাহিদার এই সুযোগকে অবৈধভাবে কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, নগরীর হাজারী লেইন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ গেট সংলগ্ন ফার্মেসি ছাড়াও নগরের বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে দ্বিগুণ দামে ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি দামে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এসব স্থানে মানুষের ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে ওষুধ প্রশাসন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরী ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ফার্মেসি মালিকেরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ার মূল কারণ চাহিদার তুলনায় বেশি ওষুধ কিনে মজুদ করা। করোনায় গুজব ও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে ওষুধ খাওয়ার প্রবণতাকে দুষলেন তারা। তাদের মতে, হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গেলেও সে তুলনায় ওষুধের যোগান নেই। মানুষের অসচেতনতাই ওষুধের দাম বাড়ার মূল কারণ।
অন্যদিকে ভোক্তারা বলছেন, করোনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সে কারণে ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। সাধারণ রোগীদের চাহিদাতো আছেই। এই চাহিদাকেই পুঁজি করেছেন অসাধু ফার্মেসি মালিকরা। ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। এ থেকে নিস্তার পেতে হলে আরও গভীরে হাত দিতে হবে প্রশাসনকে। এছাড়া জড়িতদের আরো কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ গেটের কয়েকটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয়ের পর কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এজিথ্রোমাইসিন, ফেকজোফেনাডিন, ডক্সিসাইক্লিন, লেভোফ্লক্সাসিন, মন্টিলুকাস্ট ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী জিংক, ভিটামিন সি, প্রতিষেধক হিসেবে ইভারমেকটিনসহ অনেক ওষুধের সংকট রয়েছে। পাওয়া গেলেও তা কয়েকগুণ বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। ওষুধের মোড়কে প্রদর্শিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম চাইছে ওষুধ বিক্রেতারা।
এসব কারণে ৩৫০ টাকা দামের অ্যাজিথ্রোমাইসিন ক্যাপসুল ৮০০ টাকা, ১৫০ টাকা দামের আইভারমেকটিন ট্যাবলেট ৫০০ টাকা, ২২ টাকা দামের ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল ১০০ টাকা, এমনকি ২০ টাকার সিভিটও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
‘করোনার জন্য উপকারী’-এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করে হোমিওপ্যাথিক কিছু ওষুধের জন্যও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ নামের একটি ওষুধের জন্য চট্টগ্রামের লালদীঘির পুরাতন গির্জা এলাকার বিভিন্ন হোমিও ফার্মেসিতে বাড়তি মূল্য দিয়েও অনেকে ওষুধটি কিনে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, করোনার শুরুতে কিছুটা ওষুধের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের নজরদারি ও জেলা প্রশাসনের অভিযানের পর সে সংকট দূর হয়েছে এবং দামও ন্যায্যতার ভিত্তিতে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও এই দৌরাত্ম শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
Discussion about this post