নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ঋণ নিয়ে অনেকেই পড়াশোনা করেছে, নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশে ছাত্রদের শিক্ষা ঋণ শুধুই বিজ্ঞাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ ল্যাপটপ, কম্পিউটার কিনতে, টিউশন ফি দিতে, অনেক কিছুতেই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে, কিন্তু গরিবের সঞ্চয়ের অর্থে ধনীর গাড়ি কিনতে ঋণ দিতেই তাদের আগ্রহ বেশি। আজ মঙ্গলবার (৭ জুলাই) মহিবুল হাসান চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাস্টাসে এসব কথা জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর স্ট্যাস্টাসটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :
সাধারণ মানুষের ভোগ সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য, ব্যক্তি পর্যায়ে ভোক্তা ঋণ সুবিধা, ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসা বা শিল্পে অর্থায়নে ব্যাংকগুলোর তেমন আগ্রহ দেখা যায় না, যা দেখা যায় নামমাত্র। শাখাসমূহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নির্বাহীদের বিশাল বেতন ভাতা, পরিচালকদের পেছনে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচে যতটা তারা আগ্রহী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মূল শর্ত, সাধারণ মানুষের ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষুদ্র-মাঝারি অর্থায়নে ততটা আগ্রহী তারা নয়। সব ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহীরা সবাই আসলে বাস্তবে বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। রিটেইল ব্যাংকিং পর্যায়ে ডিপোজিট সংগ্রহকেই তারা মনে করেন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থায়ন নয়। আমাদের টাকা ব্যাংকে সঞ্চয় হিসাব খুললেও আমাদেরই থাকত, না খুললেও আমাদেরই থাকত।
আমি হিসাব খুলে শুধু টাকা ব্যাংকে দিয়ে আসি, ব্যাংক আমাকে কি ঋণ সুবিধা দেয় ব্যক্তি পর্যায়ে? আমি এখনো জামানত বিহীন ২০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার ঋণ পেয়েছেন এমন একজনকেও পাইনি। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনেক আগেই অনুমতি দিয়েছে। হয়তবা কাগজে-কলমে এ জামানতবিহীন ঋণের অস্তিত্ব আছে, কিন্তু এতই বিরল, চোখে দেখা যায় না। করোনা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠার অন্যতম কৌশল সাধারণ ব্যক্তির ভোগ সক্ষমতা বাড়ানো, যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভোগের খাত বৃদ্ধি পাবে। ধনী ব্যক্তির ভোগ সক্ষমতা আরো ঋণ দিয়ে বাড়ানোর চেয়ে, সাধারণের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করলে ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ আরো শক্তিশালী হবে।
তবে বর্তমান প্র্যাকটিস হলো হবিগঞ্জ থেকে সঞ্চয় নিয়ে, গুলশানের ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়া। দামি গাড়ি-বাড়ি-ঘড়ির লোক না হলে ব্যাংক অর্থায়ন করে না। বিদেশে আমরা দেখি ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা ছাত্র অবস্থাতেও টাকায় ২০ হাজার থেকে দশ লাখ টাকা সম্পূর্ণ বিনা জামানতে ক্রেডিট স্কোরের ভিত্তিতে ঋণ পেয়েছি। ঋণ নিয়ে অনেকেই পড়াশোনা করেছে, নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশে ছাত্রদের শিক্ষা ঋণ শুধুই বিজ্ঞাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, অথচ ল্যাপটপ, কম্পিউটার কিনতে, টিউশন ফি দিতে, অনেক কিছুতেই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে, কিন্তু গরিবের সঞ্চয়ের অর্থে ধনীর গাড়ি কিনতে ঋণ দিতেই তাদের আগ্রহ বেশি।’
Discussion about this post