নিউজ ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখার খাতার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কারাগারে কী ধরনের যন্ত্রণায় থাকতেন, তা বাইরে বলতেন না। যা জানতে পেরেছেন, লেখা থেকেই জেনেছেন।’
বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হন চুন্নুর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে শুরু অধিবেশনে তিনি মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাবা কিন্তু কখনও তার কারাজীবনের কোনো কষ্ট, দুঃখ-যন্ত্রণা কিছুই বলেননি। যেটুকু আমরা জানি এই বই পড়ে। তার লেখা পড়ে আমরা এটা জেনেছি। এর বাইরে আমরা কিছু জানতে পারিনি। কোনোদিন তিনি মুখফুটে বলতেন না যে উনার কষ্ট ছিল। ক্খনও বলেননি। আমি রেহানাকে জিজ্ঞাসা করেছি। ও ছোট ছিল তো, ও মাঝে মধ্যে আব্বাকে এ সমস্ত জিজ্ঞাসা করত, যা আমরা সাহস পেতাম না। আমি কয়েকদিন আগেও জিজ্ঞাসা করেছি ‘তুই কি কিছুই শুনিস নাই?’ জবাবে বলল ‘আব্বাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলেছিলেন তোর শোনা লাগবে না। শুনলে সহ্য করতে পারবি না।’ উনার কথা ছিল, ‘শোনার দরকার নেই। আমি বলব না। তোরা সহ্য করতে পারবি না।’
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এত কষ্ট একজন মানুষ একটা দেশের জন্য, জাতির জন্য করতে পারেন তা ধারণার বাইরে। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন সংগঠন করার জন্য। আওয়ামী লীগ করার জন্য। দেশের মানুষের জন্য তিনি সব কিছুই ছেড়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। ক্ষমতায় যেতে পারতেন। কিন্তু উনার লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বাধীন করার।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্লাসিফাইড রেকর্ড সংগ্রহ করেছি। যেখানে বাংলাদেশের বিষয়টি রয়েছে। সাউথ এশিয়ার কিছু বিষয় আছে। অনেকগুলো কাগজ। বিশাল। এগুলো আমার অফিসে ছিল। করোনাভাইরাসে ঘরে থাকার কারণে সেগুলো সব ধীরে ধীরে দেখছি। সেখানে ওই সময়কার কিছু পাওয়া যায় কিনা সেই চেষ্টা করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখার খাতার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হলেন, চোখ মুছলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাগারে কী ধরনের যন্ত্রণায় থাকতেন, তা বাইরে বলতেন না। যা জানতে পেরেছেন, লেখা থেকেই জেনেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে তাদের বাসা শুধু আক্রমণই করেনি, দীর্ঘ নয় মাস লুটপাট করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সবকিছু লুট হয়ে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর লেখার খাতাগুলো কেউ নেয়নি। মনে হয় তাদের পছন্দ হয়নি। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বাড়িও লুট হয়। এরপরও তিনি খাতাগুলো উদ্ধার করেছেন।
বাবার লেখা খাতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে চোখ মোছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাবা যখন কুর্মিটোলা কারাগারে, ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন, তখন মা সব সময় একটা খাতা দিয়ে আসতেন লিখে রাখার জন্য। আমি গেলে আমাকে বাবা লেখা খাতাটা দিয়ে দিতেন। বলতেন, এখন খাতাটা পড়বি না। যখন আমি থাকব না, তখন পড়িস। এরপর আর খাতাগুলো ধরিনি।’
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাজীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা কিচ্ছু বলেননি আব্বা। যতটুকু জেনেছি এই লেখা পড়ে। তিনি নিজে থেকে বলতে চাইতেন না। রেহানাকে (শেখ রেহানা) জিজ্ঞেস করেছি, তুই কিছু শুনেছিস। ও ছোট ছিল, মাঝেমধ্যে আব্বার কাছে জানতে চাইত। সেদিনও ওকে জিজ্ঞেস করেছি। ও বলল, বাবা বলতেন, তোরা এগুলো জানলে সহ্য করতে পারবি না।’
Discussion about this post