বিনোদনডেস্ক
সাড়ে তিন দশকের সংগীতজীবনে চলচ্চিত্রে সাড়ে তিন হাজারের মতো গান গেয়েছেন কনকচাঁপা। এর মধ্যে বেশির ভাগ গানেই সহশিল্পী ছিলেন প্লেব্যাক–সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। দেশের চলচ্চিত্রের গানের বরেণ্য এই শিল্পীর আজ শেষ বিদায়ের দিন। আজকের দিনে সহশিল্পী নিয়ে কথা বলেছেন কনকচাঁপা-
এক জীবনে আপনারা দুজন অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। প্রথম কোন গানটি গেয়েছিলেন?
আমরা দুজন প্রথম গেয়েছিলাম ১৯৮৬ সালে, সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানের সংগীত পরিচালনায় ‘নাফরমান’ ছবিতে। শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং হয়, সেদিনই তাঁর সঙ্গে প্রথম সামনাসামনি দেখা। মনে হলো দাদা কত দিনের চেনা মানুষটি। তারপর ৩০ বছরের বেশি সময় নানা সময়ে গান করেছি আমরা, দাদার সঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছি।
এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে সর্বশেষ গাওয়া গান কোনটি ছিল?
শেষ গান কোনটি গেয়েছিলাম, শেষ কবে আমাদের দেখা হয়েছিল—মনে করতে পারছি না। তবে গেল বছর অথবা তার আগের বছর হবে হয়তো।
আপনারা একসঙ্গে দেশ-বিদেশের অনেক জায়গায় গান নিয়ে ভ্রমণ করেছেন। কে আগে গাইতেন?
বেশির ভাগ অনুষ্ঠানে আমি আগে গাইতাম, তারপর কিশোরদা। তাঁর গাওয়া শেষ হলে তিনি মঞ্চ থেকে আমাকে ডাকতেন। বলতেন, ‘কনককে মঞ্চে আমার সঙ্গে ডুয়েট গাইবার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ আমি সব সময়ই বলতাম, অনুরোধ শব্দটা বলবেন না প্লিজ! কিন্তু তিনি কখনোই তা শোনেননি।
দীর্ঘ সংগীতজীবনে মঞ্চে গাইতে গিয়ে নিশ্চয় অনেক মজার ঘটনা ঘটেছে। পাঠকদের জন্য যদি কিছু বলতেন?
মঞ্চে আমরা নিজেদেরই স্টাইলে গাইতাম। কিশোরদা ভাবতেন আজকালকার চল অনুযায়ী মঞ্চে একটু অভিনয় দরকার! সেই অভিনয় করে ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ গাইতে গিয়ে আমার দিকে তাকাতেই লজ্জা পেতাম। মঞ্চে দ্বৈত গানে একটু প্রেমিক–প্রেমিকার অভিনয় দর্শক পছন্দ করে। কিন্তু সেই অভিনয়ে আমি ও কিশোরদা দুজনই ভীষণ আনাড়ি! সবশেষে মঞ্চ জমানোর জন্য ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’ গানের ‘তোমার কানের সোনা’ গাইতে গাইতে দূরত্ব বজায় রেখেই আঙুল উঁচিয়ে আমার কানের দুলে ইঙ্গিত করতেন। আমি মঞ্চে লজ্জায় হাসতাম। একবার তো যে–ই ‘তোমার কানের সোনা’ বলে আঙুল উঁচিয়েছেন, ঠিক তখনই কাকতালীয়ভাবে কানের একটা দুল খুলে পড়ে গেল! এলইডি স্ক্রিনে দর্শক সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। সবাই হেসে উঠল, পেছনে বাজনা বাজছে, কিশোরদা বলেছেন, ‘আমি কিন্তু ওর কানের দুল খুলিনি, চেয়েছি মাত্র।’ আবার দর্শকদের হাসি।
Discussion about this post